পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

'সাত দফা' বুমেরাং, দলিত-বিন্যাসই ম্যাজিক

  • 28 May, 2024
  • 1 Comment(s)
  • 909 view(s)
  • লিখেছেন : সুমিত দাস
সাত-সাতটি দফা। ২০১৯-এর মত নরেন্দ্র মোদি যাবেন আর জয় করবেন! আপাতত সে গুড়ে বালি। উল্টে দফায়-দফায় দলিত- প্রান্তিকের ভোট গোছালেন অখিলেশ-তেজস্বী-রাহুল। ফলাফল এখন স্রেফ ম্যাজিক।

বিজেপি কমছেই। এটা নিয়ে দ্বিমত ওয়াকিবহাল মহলে তেমন নেই। 'বিজেপি/মোদি ক্ষমতায় আসছে না'- যোগেন্দ্র যাদবের পরিসংখ্যানে এমন ইঙ্গিত নেই। বরং বিজেপি ২৫০-২৬০ আর এনডিএ ৩০-৩৫, যোগেন্দ্র যাদবের এই পূর্বানুমানেও তেমন মুন্সিয়ানা দেখছি না। 'তিনি কেন এমন বলছেন'- তার ভারে গত ২৪ ঘন্টায় পরপর ভিডিওতে যুক্তি সাজিয়ে একই অঙ্ক নামাচ্ছেন একসময়ের পরিসংখ্যানবিদ। অবশ্য, বিজেপির পরাজয় তিনি চান, - এতে সন্দেহ নেই।

এই লোকসভা নির্বাচনে স্রেফ কলুর বলদ মনে হচ্ছে প্রশান্ত কিশোরকে। পেশাদারি সংগঠন, তথ্য-পরিসংখ্যান যথাযথ না থাকলে, স্রেফ নামের ভারে কথা বললে যে মোদির মতই বাতেলাবাজ হতে হয়, তা তিনি নিজেও জানেন। তাই, তার বাতেলাবাজি আলোচনার বাইরে থাক। একান্ত প্রয়োজনীয় মনে হলে যে কোনও স্তরের বিজেপি কর্মীর সঙ্গে কথা বললে, প্রশান্ত'র বয়ান পাওয়া যাবে।

তাহলে কি কোনও অনুমানই আসছে না? নাকি ইতিমধ্যে ইভিএম ট্যাম্পার্ড হতে হতে বহু ভোট প্রতি কেন্দ্রে বিজেপির দিকে যোগ হচ্ছে? মনের মত সংখ্যা বানিয়েই নেবে মোদি? - মনে হয় না এতটা সহজ।

এবার মন্ডল বনাম কমন্ডলের লড়াইও লড়ছে উত্তর ভারত। প্রথম দফার নির্বাচনের সঙ্গে সপ্তম দফার জার্নিতে ইনকনফিডেন্ট বিজেপি নিজেদের কনফিডেন্ট দেখাতে গিয়ে বারবার নিজেদেরই ফাঁদে ফেলেছে। জাতপাতের রাজনীতির নতুন অধ্যায় নির্মাণ হয়েছে। ভোট প্রক্রিয়া চলতে চলতে যে গতিতে ও রাজনৈতিক চাহিদায় নানান জাতের পরিচিতির সমন্বয় তৈরি হল, মুসলমান ভোট বাদ দিলে, - তা বিজেপিতেই ছিল। কেবল বিন্যাস বদলে গেছে রোজ। বিজেপির করা ৭টি দফা ও প্রতি দফায় সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং,  যা বিজেপি গত লোকসভায় সফল ভাবে করতে পেরেছে, উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে সে বিন্যাস নিজেদের দিকে আনতে প্রাণপাত করছেন অখিলেশ-তেজস্বী। দুটি রাজ্যের স্হানীয় সরকার বিরোধী হাওয়াও তাদের সঙ্গে যোগ হচ্ছে।  এখানে পশ্চিমবঙ্গ উল্টো মেরুতে আছে। তবু, আদিবাসীদের অবস্হান - উনিশ-বিশ। কিন্তু ওবিসি-এসসি? পশ্চিমবঙ্গ এখানেও খানিক দূরত্বে অবস্হান করছে।

উত্তর ও পশ্চিম ভারতে বিজেপির গড়ে অপশাসন, মিথ্যা ও বাতেল্লাবাজির মুখে প্রান্তিক জনতার কনফিডেন্স দরকার ছিল। অখিলেশ, তেজস্বী, কেজরিওয়াল, রাহুলরা তা দিতে পেরেছেন। পারছেন। একের পর এক দফায় তাঁদের উচ্চারণ তীক্ষ্ণ হয়েছে।  প্রতি দফার নতুন রসায়নের ছাপ পড়ছে মোদির ভাষণে। এন্টায়ার পলিটিক্যাল সায়েন্স যে আসলেই কুশিক্ষায় পূর্ণ, তা প্রকাশ্যে আসছে।

বাকি রইল প্রি-পোল ওপিনিয়ন। তূলনায় এক্সিট পোল সহজ। ওপিনিয়ন পোলের সঙ্গে নানান সমাজ ও অর্থনীতির জনতা গত তিন দশকে খেলতে শিখে গেছে। মেলে না, মিলছে না - এই অভিজ্ঞতা নতুন না। প্রশান্ত কিশোর বিগত দুটি বিধানসভায় সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে। তিনি বা তার আগাম পরিসংখ্যান মোদির মত, মানে ঈশ্বরের মত নয়, এটা পরিষ্কার।  বাকি রইল - 'মোদিময় বিজেপি থাকছে, নাকি বিদায় নিচ্ছে?'

৮৯-এ ভিপি সিংয়ের পরপর ভারতে প্রান্তিক মানুষের নতুন জাতভিত্তিক সমীকরণ বিশেষত উত্তর ভারতের রাজনীতিতে মূল সংখ্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। দলিত রাজনীতির বহুস্বরে মিলিত হবার প্রচেষ্টা, তার নানান কিসিমের বিন্যাস ও শেষমেশ অধিকারের প্রশ্নে অতিদলিত ও আদিবাসী সমাজ আজ সমান সচেতন। মুসলমান বিদ্বেষ দিয়ে তাদের সঙ্গে আনা এবং অধিকারের প্রশ্নে বঞ্চিত রাখা, এই বিষয়টা ধরতে পারা কঠিন নয়। স্রেফ বিন্যাস বদলানোর কাজটা কঠিন। ৭ দফার নির্বাচনের দীর্ঘসূত্রিতা এই বিন্যাস নির্মাণে বিজেপির পক্ষে বা বিপক্ষে সহায়ক কীনা, সেটাই প্রশ্ন। ১৯-এর নির্বাচনে এই দীর্ঘসূত্রিতা বিজেপির পক্ষে গেলেও, এবার তা বদলাচ্ছে। প্রতি দফায় অঞ্চল ও পরিচিতিসত্তার রসায়নে বিজেপির জনসভায় লোকবল কমছে, অখিলেশ-তেজস্বী-রাহুলের সভায় উল্টোছবি। আর জাত-সমাজভিত্তিক অবস্হান  বিজেপির পক্ষে তখনই ছিল, যখন তাঁরা বুঝেছেন - বিজেপি জিতছে। নয় সংঘাত, নয় সহাবস্হান। সরল সমীকরণ।  কিন্তু, বঞ্চনার অভিজ্ঞতা চাক্ষুষ করেছেন সবাই। এক্ষেত্রে, সরকার ফেলার কনফিডেন্স না পাওয়া পর্যন্ত, অপেক্ষাটাও সমান রাজনৈতিক।

চরম বেকারত্ব আর চরম হিন্দুত্ব রামমন্দিরের প্রাঙ্গণে ঐশ্বরিক কোনও আনন্দময় পরিবেশ তৈরি করছে না। ফলে দুর্জন নয়, স্বয়ং বিজেপিও ভাবছে - অযোধ্যা, মানে ফৈজাবাদের আসনটি জুটলে হয়! এই পরিস্হিতিটা আসলেই প্রান্তিক - দলিত - সংখ্যালঘুর একত্রিত হবার ফলাফল। যারা গত ১০ বছর স্বাধীন ভারতে সবচেয়ে বেশি অপমানিত। যে দলিত বা অতিদলিতদের মুসলমান পেটানোর পূণ্যকর্মে এগিয়ে দিয়েছিল বিজেপি, ইতিহাসের মোর ঘোরানোর দায়ও তাঁদের। উচ্চবর্ণের ভোট পাবার লোভে রামমন্দিরের চাবি খোলা রাজীবের সন্তান  রাহুল গান্ধী তা জানতেন, সময় তাঁকে শিখিয়ে নিয়েছে।  অখিলেশ বা তেজস্বীদের জোর সেখানেই বেড়েছে বহুলাংশে।  এই 'বহুলাংশটা ঠিক কত?' - না ধরা যাচ্ছে না। কারণ, ঠান্ডাঘরের মিডিয়া সামাজিক দায়ের প্রশ্নে বিকৃত, বিক্রিত। মাটির সঙ্গে দূরত্ব আছেই। আর আইডিয়াল গোদিমিডিয়ার মডেল তাতে ঠুলি যোগ করেছে। ও ঠুলি পরলে ফৈজাবাদে স্রেফ রামমন্দির দেখা যায়। খুলে ফেললেই প্রকাশ্যে আসে 'দলিত-মুসলিম' সমন্বয়। যে সমন্বয়ের ঐতিহাসিক ক্ষণ মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টিকে সাফ জানান দিয়েছে, - নয় বিরুদ্ধে সোচ্চার হও, না হলে পিছিয়ে যাও। ফলত, সমাজ-অভিজ্ঞতায় ভর করে ৭টি দফায় বহুজন সমাজ একত্রিত হয়েছে। সংখ্যায় সংখ্যা জুড়েছে। ফারাক গড়ে দেওয়া ৮০ সিটের উত্তর প্রদেশের উচ্চবর্ণেরও এমন পরিস্হিতিতে দূরে থাকার কথা নয়। যে সমাজে ভোট আসলে ভারসাম্য আনে, সেই সমাজের ভোটার জানেন - কখন কী করতে হয়! ১৯-এ ৬২ আসন পাওয়া বিজেপি এখানে অর্ধেক হয়ে গেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। বিহারে গত লোকসভায় ৪০-এ ৩৯ পাওয়া এনডিএ অর্ধেকের বেশি কমে গেলে একই। এই ১২০ আসনের অর্ধেক ৬০ জিতলেই মোদি সহ বিজেপি-এনডিএ অতীত।  যা কঠিন নয়। ৭টি দফা বিজেপির বানানো হলেও তার নির্মাণ ও বিন্যাস বিজেপিরই বানানো ইস্যুতে বিরোধীদের একত্রিত হওয়ার ফলাফল। যেখানে বেকারত্ব, অগ্নিমূল্য, অগ্নিবীর, সর্বোপরি  প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে পৌঁছে যাওয়া বিজেপির সংবিধান বদলের বার্তা রামমন্দিরের চেয়ে বিশাল। মোদি নামক স্বঘোষিত ভগবানের চেয়ে প্রবল। সমগ্রে যাকে জনগন বলে।  

ওপিনিয়ন পোল, পন্ডিতদের পরিসংখ্যান পাশে রেখে - আরো একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। বিজেপি সমস্ত রাজ্যের জন্য আলাদা ইস্যু বানিয়ে লোকসভা নির্বাচনকে লোকাল করতে চেয়েছে শুরু থেকে। ফলে সন্দেশখালির বাংলায় হাথরাস পৌঁছবে না - এমন একটা বাতাবরণ বানিয়েছে শুভেন্দুরা। উত্তরপ্রদেশ-বিহার-মহারাষ্ট্রে এই লোকাল-শামুকে কোমর থেকে না পা আলাদা হয়ে যায়! বাকি রইল স্রেফ মঙ্গলসূত্র, মাছ-মাংস আর মুজরা। ভক্তমন রুচি খোঁজে না। তবে সঠিক সময়ের সঠিক আঘাতে ভক্তি উবে যেতে পারে। রাজনীতির কারবারি হিসেবে অখিলেশ-রাহুল-তেজস্বীরা সঠিক টাইমিং-এ বাউন্ডারি মারতে ভুল করবেনা বলেই মনে হয়।

২৭২-এর ম্যাজিক সংখ্যা সীমা পার করছে না বিজেপি। এনডিএ করতে পারে। এই 'ধরি মাছ, না ছুঁই পানি' গোছের ফলাফল আসতেই পারে। কিন্তু আরো একটি সত্য সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে ভারতের নির্বাচনের ইতিহাসে। দলিতের নানান পরিচিতিতে ভাগ হয়ে যাওয়ার যে রাজনীতি গত ৩০ বছর দেখেছে উত্তর ভারত, তামিলনাড়ুর মত তাদের রাজনীতির নিয়ন্ত্রক হওয়া থেকে তাদের দূরেই থাকতে হচ্ছে। ৭ দফার বিন্যাস এবং নানান পরিচিতির এক জায়গায় হওয়ার প্রবণতায় সে অস্মিতা ফেরার সম্ভাবনা প্রবল। কর্ণাটক,  রাজস্হান, পাঞ্জাব, হরিয়ানা হয়ে বিজেপির আসন কমার খবর কি উত্তরপ্রদেশের অচেনা গ্রামের চায়ের দোকান বা বাজারে নেই? আছে নিশ্চিত। নইলে ধ্রুব রাঠি, দীপক শর্মাদের দেখে কারা? কারা ভিড় বাড়াচ্ছেন অখিলেশ-রাহুল-তেজস্বীদের সভায়?

শেষমেশ, একটা ছোট্ট খবর। গত কয়েকদিনে সংসদ ও তার সংলগ্ন এলাকার নিরাপত্তা আমূল বাড়ানো হয়েছে৷ নিরাপত্তারক্ষী, যন্ত্রপাতি প্রচুর। যেন যুদ্ধক্ষেত্র। কে জানে, শ্রীলঙ্কার জনতার গর্জন এখানেও ভয় দেখাচ্ছে কীনা? ভয় তো থাকেই।  যদি জনতার নির্বাচনী বার্তার বেশি ইভিএম-ট্যাম্পারিং বা জোর করে ভোট বাড়ানো হয়, সমাজ হুলুস্থুল হবেই। ম্যানডেট ছাপিয়ে সংখ্যা এলে সইতে পারবে তো বিজেপি? কৃষকের মিছিল থামাতে রাস্তায় পেরেক পোতা আরএসএস জানে, - প্রবাহ  ঠিক কতটা নিয়ন্ত্রণে আর কতটা নয়।  উনিশের পুলওয়ামা আর সম্ভব নয়। পুলওয়ামা-বালাকোটের চিত্রনাট্য অগ্নিবীরের অপমানে বিলীন।  উনিশের ফলাফলও ক্রমেই সুদীর্ঘ অতীত। বাকিটা জানে উত্তরের দলিত। যাদের ক্রমাগত পথ দেখায়  দক্ষিণের অন্তজ। ইতিহাস ব্যাপী নিজেদের সংখ্যা, অবিচার, না-পাওয়া ও সংবিধান মারফত পাওয়া অধিকার সম্বন্ধে পিছরে বর্গ ওয়াকিবহাল বলেই ইতিহাস রচনার দায়ও তাঁর। মন্ডল কমিশন আসার পর কমণ্ডলের বাড়বাড়ন্তের সর্বোচ্চ ফলাফল মোদি-জমানা। সাড়ে ৩ দশক পর মন্ডলের হাতেই ফিরেছে ম্যাজিশিয়ানের কাঠি। বাকিটা ৪ জুন।

1 Comments

koushik shil

03 June, 2024

Apni ki gaja taja kheye lekhen nki? choto comrades der fantasy dekhachhen

Post Comment