একশ বছরের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আর এস এস)। একথা অস্বীকার করার কোন জায়গা নেই যে এই মুহূর্তে ভারতে সবচেয়ে প্রভাবশালী আর্থ- সামাজিক- রাজনৈতিক সংগঠনের নাম আর এস এস। একাধিক শাখা সংগঠনকে হাতিয়ার করে,সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদের নামাবলী গায়ে,হিন্দি- হিন্দু - হিন্দুস্তানের শ্লোগান দিয়ে তাদের পরিকল্পিত হিন্দু রাষ্ট্রকে সফল করতে নিরলস কাজ করে চলেছে সংঘ পরিবার। উপুর্যুপরি নির্বাচনী সাফল্য এবং কর্পোরেট হিন্দুত্বের রসায়ন তাদের কাজকে অনেক সহজ করেছে। এই মুহূর্তে দেশ জুড়ে যে তীব্র মেরুকরণ ও ধর্মীয় হিংসার প্রকোপ আমরা উপলব্ধি করছি তা ৪৭' পরবর্তী ভারত কখনো প্রত্যক্ষ করে নি। সম্ভবত ভারতে এমন কোন কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান বা এজেন্সি নেই যেখানে সংঘ তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। তাই আজ ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াই গড়ে তুলতে হলে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের রণ নীতি ও রণকৌশলকে উপলব্ধি করা জরুরি। মনে রাখতে হবে বীর সাভারকর ও হেডগাওকারের মূল মন্ত্রকে অবিকৃত রেখেও সংঘ পরিবার নতুন সময়ে তাদের রণকৌশলকে সময় উপযোগী করে তুলছে। একই সঙ্গে বিপুল ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি তাদের নতুন প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি করছে।
বেশ কিছু দিন আগে ( ১৫ জানুয়ারি, ২০২৩) রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রধান ( সংঘের ভাষায় সরসংঘচালক) মোহন ভাগবতের এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে যা সংঘের রাজনীতিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে বুঝতে অবশ্য পাঠ্য হওয়া উচিত। প্রথমত সংঘ পরিবারের লোকেরা যেহেতু যৌক্তিক তর্কে খুব একটা আগ্রহী নন তাই মেইন স্ট্রিম মিডিয়াকে তারা বরাবরই এড়িয়ে চলেন।দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও কখনো সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন না। এই সাক্ষাৎকারটিও সেই অর্থে কোন মিডিয়া উদ্যোগ নয়, এটি নেওয়া হয়েছে সংঘ পরিবারের নিজের দুই মুখপত্র অর্গানাইজার এবং পাঞ্চজন্যর পক্ষ থেকে। এখানে প্রশ্ন গুলোকে এমন ভাবে সাজানো হয়েছে যাতে মোহন ভাগবত তাদের বিশ্ববীক্ষা, দর্শন ও রণকৌশলকে পাঠকদের কাছে পরিষ্কার করে বোঝাতে পারেন। এই কারণে সাক্ষাৎকারটিকে একটি পরিকল্পিত প্রচার কৌশল বলা যেতে পারে। আরএসএস প্রধানের বক্তব্যের তাই স্বল্প মেয়াদী ও সূদুর প্রসারী প্রতিক্রিয়া আছে। দ্বিতীয়ত সরসংঘচালকদের বিবৃতি, তাদের মুখপত্রে প্রকাশিত বয়ান নিয়ে প্রতিবারই নানান ধরণের বিতর্ক হয়। কিন্তু এবারের বিতর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল বৃহত্তর হিন্দুত্বের রাজনীতির একটা অংশ সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হবার পর মোহন ভাগবতকে তীব্র আক্রমণ করেছেন, এমনকি তার বিরুদ্ধে এফ আই আর দায়ের হয়েছে কারণ এলজিবিটি প্রশ্নে ভাগবতের অবস্থান। তৃতীয়ত নরেন্দ্র মোদি - অমিত শাহের ক্রমবর্ধমান ক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে সংঘ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে বলে অনেকে বলার চেষ্টা করছেন, এই পরিস্থিতিতে সংঘ আদৌ এককেন্দ্রিক সংগঠন হিসাবে রয়েছে কি না ক্ষমতার একাধিক কেন্দ্র তৈরি হয়েছে-- এই বিষয়টাও গুরুত্বপূর্ণ। এই সাক্ষাৎকারে সে দিকেও কিছু দিকনির্দেশ করছে।
এই সাক্ষাৎকারের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল দেশের চলমান রাজনীতিতে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের ভূমিকা সম্পর্কে ভাগবতের বক্তব্য। বহু দিন ধরে সংঘ পরিবারের বক্তব্য ছিল সাংস্কৃতিক সংগঠন হওয়ার কারণে রাজনৈতিক প্রশ্নে সংঘের কোন ভূমিকা থাকে না।কিন্তু একথা সবার জানা দেশের রাজনীতিতে প্রধান নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠা সংঘের অন্যতম উদ্দেশ্য। এই আলোচনায় ভাগবত আর সেই ' অরাজনৈতিক ' মুখোশ পড়ার প্রয়োজন অনুভব করেন নি।তিনি বলেছেন সূচনালগ্ন থেকে সংঘ কখনো নিত্যদিনের রাজনীতি (নির্বাচনের রাজনীতি, ভোটের রাজনীতি, একে অপরকে কাদা ছোঁড়ার রাজনীতি ইত্যাদি ইত্যাদি) নিয়ে মাথা ঘামায় নি। কিন্তু যখনই রাষ্ট্রনীতি,জাতীয় স্বার্থ ও হিন্দু স্বার্থের প্রসঙ্গ এসেছে তখনই কিন্তু সংঘ মাথা গলিয়েছে। ভাগবতের ভাষায় যখনই রাজনীতি ভুল রাস্তায় গেছে (পড়ুন হিন্দু রাষ্ট্র ভাবনার বিপরীতে গেছে), আমাদের সামাজিক চেতনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তখনই সংঘ চিন্তিত হয়েছে। তবে একই সঙ্গে ভাগবত এটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন যে পূর্বেকার পরিস্থিতি থেকে এখনকার পরিস্থিতির গুণগত পার্থক্য হল এখন সংঘের হাতে ' রাজনৈতিক ক্ষমতা ' এসে গেছে।তারা আজ কতটা ক্ষমতাশালী সেটা বোঝাতে বলা হয়েছে জনগন বা কোন গোষ্ঠী যদি কোন কিছুর আকাঙ্খা করেন বা তাদের কোন রাজনৈতিক দাবি দাওয়া থাকে তবে তারা সংঘ পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।আরও নজরকাড়ার মত বিষয় হল এই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ভাগবত ' প্রনবদার' ( ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় কংগ্রেসের কয়েক যুগের অন্যতম নেতা) কথা উল্লেখ করেছেন। কোন বিষয়ে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সাহায্যের দরকার হলে প্রনববাবুর মত আরো অবিজেপি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা যে সংঘের মুশকিল আসান হয়ে ওঠেন, তা এই বয়ানে পরিষ্কার।
সরসংঘচালক মোহন ভাগবতকে প্রশ্ন করা হয়েছে আজ যখন সারা দেশে হিন্দু বিশ্বাস,হিন্দু মূল্যবোধ ও সনাতন চিন্তার এক জাগরণ ঘটছে তখন এই নতুন পরিস্থিতিতে সংঘ পরিবারের রণনীতি কি হওয়া উচিত! এই প্রশ্নটার উত্তরে ভাগবত আরেকবার হিন্দু রাষ্ট্রের ধারণাটিকে সুকৌশলে বিবৃত করেছেন। তিনি বলছেন ১০০০ বছর ধরে হিন্দুরা যুদ্ধের মধ্যে আছেন।এই যুদ্ধ চলছে বিদেশি আক্রমণকারী, বিদেশি প্রভাব ও চক্রান্তের বিরুদ্ধে। অর্থাৎ এক নিশ্বাসে সংঘ পরিবারের মতাদর্শ অনুসারে ভাগবত সুলতানি যুগ,মুঘল যুগ,ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসন,এমনকি ৪৭':পরবর্তী প্রজাতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ভারতকে এক বন্ধনীর মধ্যে এনে ফেললেন। একই সঙ্গে মনে করিয়ে দিলেন আজকের যুদ্ধে শত্রুপক্ষ দেশের ভেতরে (enemy within) অবস্থান করছে। আমাদের বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না দেশের ভেতরের শত্রু বলতে ভাগবত কাদের চিহ্নিত করতে চাইছেন। তবে একই সঙ্গে তার তথাকথিত হিন্দু ভাবনার মহত্তকে বোঝাতে তিনি বলছেন গোঁড়া মুসলমান,আব্রাহামপন্থী,কমুনিস্ট, ব্ল্যাক ক্যাপিটালিজমে বিশ্বাসীরা মনে করে অন্যকে তাদের ভাবনার শরিক হতে হবে নতুবা ধ্বংস হতে হবে।কিন্তু ' হিন্দু বিশ্ববীক্ষা' কাউকে ধ্বংস করতে চায় না,চায় সংলাপ,তাদের অন্তরের পরিবর্তন। অবশ্য ভারতবাসী হিসাবে গুজরাট গণহত্যা, দিল্লি দাঙ্গা, গোরক্ষা ও লাভ জেহাদ বন্ধের নাম রোজ সংখ্যালঘু নিধনের মাধ্যমে এই শান্তিপূর্ণ হিন্দু বিশ্ববীক্ষা আমরা রোজ প্রত্যক্ষ করছি।
এই হিন্দু রাষ্ট্রে সংখ্যালঘু মুসলিমরা কিভাবে থাকবে? এ বিষয়ে মোহন ভাগবতের নিদান খুব পরিষ্কার। তাদের থাকতে হবে সমস্ত রকম ' শ্রেষ্ঠত্বের ' ধারণাকে দূরে সরিয়ে, সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের অনুকম্পার উপর নির্ভর করে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসাবে। আর হিন্দু রাষ্ট্রের সনাতন গরিমা ( যা বর্তমানে অবলুপ্ত) ফিরিয়ে আনতে আজকের চিনের মডেলকে অনুসরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে অন্তত চিন ছাড়া সংঘপরিবারের কাছে আর যে কোন মডেল নেই তা পরিষ্কার।
এই কথাগুলো যেমন নতুন নয় তেমনি নতুন নয় দলিত ও অনগ্রসর সম্প্রদায়ের প্রশ্নে সংঘ পরিবারের মতাদর্শের আভ্যন্তরীন জটিলতার প্রশ্নটি।সংঘ পরিবার প্রকল্পিত হিন্দু রাষ্ট্রের স্বপ্নটিকে সাকার করতে তপশিলি জাতি,তপশিলি উপজাতি ও ওবিসি ( আদার ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস) দের সক্রিয় সমর্থন জরুরি। একথা অস্বীকার করার কোন প্রশ্নই নেই যে এই অংশগুলোর সমর্থনকে নিশ্চিত করতে সংঘ কর্তারা নিরলস ভাবে পরিশ্রম করে চলেছেন এবং বহু রাজ্যে তারা সংঘ পরিবারের সামাজিক ভিত্তি হিসাবে স্বীকৃত। একাধিক সংগঠন তৈরি করা হয়েছে যার মধ্যে ' সামাজিক সমরাস্তা মঞ্চ' ও ' বনবাসী কল্যাণ আশ্রম' এর নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য।কিন্তু একথাও সত্য যে আদ্যন্ত ব্রাহ্মণ্যবাদী মতাদর্শ জারিত সংঘপরিবার ভারতীয় সমাজ জীবনের চরমতম অভিশাপ বর্ণ ব্যবস্থাকে সমর্থন করে এবং এই ব্যবস্থায় তত্ত্বগত ও কার্যকরী অর্থে অনগ্রসর সম্প্রদায়গুলি প্রান্তিক অবস্থানে থাকে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রতিষ্ঠার সময় দ্বিতীয় সরসংঘচালক এমএস গোলওয়ারকর তার 'We or Our Nationhood Defined' বা পরবর্তী কালের আরেক তাত্ত্বিক নেতা দীনদয়াল উপাধ্যায় 'Integral Humanism' গ্রন্থে বর্ণপ্রথাকে ব্রহ্মার সৃষ্টি, যৌক্তিক ও বিজ্ঞান সন্মত বলে বর্ণনা করেছেন।কিন্তু এই অবস্থানে স্থির থেকে হিন্দু সমাজের একমাত্র প্রতিনিধি হওয়া বা আম্বেদকরের রাজনৈতিক মতাদর্শ থেকে তপশিলি জাতি ও অন্যান্য অনগ্রসর সম্প্রদায়কে মুক্ত করা সম্ভব নয় তাই প্রয়োজন হয়ে পড়েছে তাদের সংঘ পরিবারের মতাদর্শে সংযুক্ত করা।তার জন্য বর্ণ ব্যবস্থাকে নানান নতুন মোড়কে উপস্থিত করার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। নব্বই এর দশকে আমরা দেখতে পাই আরেক তাত্ত্বিক নেতা সুরেশ ভাইয়াজি জোশি বর্ণব্যবস্থা নিয়ে বলতে গিয়ে বলেন যে প্রাচীন ধর্মগ্রন্থে চার বর্ণের বিভাজন ছিল না।মধ্যযুগে বিদেশি আক্রমণকারীদের বর্বর অত্যাচারের প্রতিক্রিয়ায় বর্ণব্যবস্থার উদ্ভব হশ।কিন্তু সেই অপযুক্তিকে খুব একটা চিঁড়ে ভেজে নি।
মোহন ভাগবত এই সাক্ষাৎকারে ও পরে সন্ত রবিদাস উৎসবে অনগ্রসর সম্প্রদায়ের মানুষদের কাছে বার্তা দেন-- " I exist in all beings.Whatever their name or colour, all have the same ability and deserve the same redpect.All are my own.No one is superior or inferior based on the scriptures.What the Pandits say is a lie.We have lost our way be getting entangled in this imagination of superior and inferior Castes.This delution has to be done away with." এই বক্তব্যের মধ্যে যতই চমকদার বিপ্লবীয়ানা থাকুক না কেন, সংঘ পরিবারের বিভিন্ন অংশ থেকে সরাসরি এই বক্তব্যকে নাকচ করা হয়েছে।বিভিন্ন শংকরাচার্যরা প্রথমে প্রতিবাদ শুরু করেন ও পরে বিভিন্ন স্তরের তাত্ত্বিক নেতারা ব্রাহ্মণ্যবাদী বর্ণব্যবস্থার শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে সওয়াল শুরু করেন।বিতর্ক এতটাই গুরুতর আকার নেয় যে বিবৃতি দিয়ে বলা হয় ভাগবত ' পন্ডিত ' বলতে ব্রাহ্মণ দের নয়,বিদ্বৎজন বা স্কলারদের বুঝিয়েছেন।এই যুক্তি হাস্যকর কারণ প্রাচীন কালে জ্ঞান চর্চার সমস্ত শাখায় ব্রাহ্মণদের নিরঙ্কুশ প্রাধান্য ছিল।
এলজিবিটি ও ট্রান্সজেন্ডারদের বিষয়ে মোহন ভাগবতের চালাকি আরেকবার সংঘের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বটা প্রকাশ্যে এনে দিল। যৌনতার বিভিন্ন রূপভেদ, যৌন আকাঙ্খা এক সহজাত আচরণ যা সনাতনী রক্ষণশীল সমাজ কখনো মেনে নেয় না।সংঘ পরিবারের সাংস্কৃতিক তত্ত্বে তাই এদের কোন জায়গা নেই,এরা ' অপর'।কিন্তু একই সঙ্গে এটাও বাস্তবতা যে এই মানুষেরা আজ তাদের অধিকার নিয়ে সরব,এক উদীয়মান শক্তি।এই সাক্ষাৎকারে একদিকে এই মানুষদের জীবনের অধিকারকে স্বীকার করেছেন কিন্তু তার চোখে এরা ' অপর'।ভাগবত তাদের ভারতীয় সমাজে বহু প্রাচীন অস্তিত্ব বোঝাতে পৌরাণিক আখ্যানের সাহায্য নিয়েছেন। জরাসন্ধের দুই সেনাপতি হনস ও ডিম্বকের উদাহরণ দিয়ে আমাদের সমাজে সমকামীদের প্রাচীন অস্তিত্বের উদাহরণ দিয়েছেন ( এক্ষেত্রে তাদের হত্যার বিষয়ে শ্রীকৃষ্ণকে ছলনাকারী আখ্যা দেওয়ার কারণে ভাগবতের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে) কিন্তু তাদের যৌন আচরণকে স্বাভাবিক বলে মেনে নেন নি।অবশ্য এই অবস্থানেও গেল গেল রব উঠেছে সংঘ সমর্থকদের মধ্যে কারণ সনাতনী হিন্দুত্ব এলজিবিটি ও ট্রান্সজেন্ডারদের অস্বাভাবিক ও পশ্চিমী সংস্কৃতির ফসল মনে করে।
২০২৫ সালে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের একশ বছর পূর্ণ হতে চলেছে। কর্পোরেট আগ্রাসন ও হিন্দুত্বের মেলবন্ধনে যে সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদের আখ্যান তৈরি করা হচ্ছে তার নিয়ন্ত্রণ আজ পুরোটাই সংঘের হাতে আছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করছে।নরেন্দ্র মোদি- অমিত শাহের জুটির ক্ষমতা কি মোহন ভাগবতদের প্রভাবকে কি দূর্বল করে দিচ্ছে? এই সাক্ষাৎকারে আত্মনির্ভর ভারত প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ভাগবত বলেছেন তাদের মতে আত্মনির্ভরতার অর্থ অর্থনীতির কেন্দ্রিকতা নয়,বিকেন্দ্রীকরণ করণ।কয়েকজনের সমৃদ্ধি নয়,দেশের বেশিরভাগ মানুষের সমৃদ্ধি।পশ্চিমের ভোগবাদী চিন্তার বিরুদ্ধে এক সহজ সরল জীবনাদর্শ। কিন্তু এই বক্তব্য যে নেহাৎই ফাঁকা আওয়াজ তা আম্বানি, আদানিদের উত্তরোত্তর ক্ষমতা বৃদ্ধি ও রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদের খোলা বাজারে নীলামের ঘটনায় পরিষ্কার। তাই হিন্দি - হিন্দু - হিন্দুস্তানের প্রকল্পের মূল আধারটিকে অক্ষুন্ন রেখে কিছু প্রসাধনী পরিবর্তন ছাড়া মোহন ভাগবতদের ঝুলিতে আর নতুন কিছু যে নেই তা এই সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট।