২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধামুক্ত পৃথিবীর যে স্বপ্ন দেখা হচ্ছিল, তার রং ক্রমশ ফিকে হচ্ছে। সুস্থায়ী উন্নয়ন লক্ষ্য বা এসডিজি-২ (জিরো হাঙ্গার)-এর উদ্দেশ্য ছিল এই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিশ্ব থেকে ক্ষুধা নির্মূল করা। সম্প্রতি প্রকাশিত গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স (জিএইচআই) ২০২৫-এর প্রতিবেদন বলছে, সেই লক্ষ্য অধরাই থেকে যাবে। রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ২০১৬ সালের পর বিশ্বব্যাপী ক্ষুধার তীব্রতা খুব একটা হ্রাস পায়নি, বরং জিএইচআই স্কোর ১৮.৩-এর কাছাকাছিতে এসে থমকে আছে। এটি ‘মডারেট হাঙ্গার’ বা ‘মধ্যম ক্ষুধা’- র স্তরকে নির্দেশ করে। যদি এই গতিতে চলতে থাকে, তবে বিশ্বব্যাপী ‘লো হাঙ্গার’ বা 'কম ক্ষুধা' - র স্তরে পৌঁছাতে কমপক্ষে ২১৩৭ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে – অর্থাৎ নির্ধারিত সময়সীমার চেয়ে এক শতাব্দীরও বেশি সময় লাগবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
ভারত এখন বিশ্বের দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলির মধ্যে অন্যতম। জিডিপির নিরিখে জাপান না ভারত – কে এগিয়ে, সেই বিতর্ক যখন চলছে, ঠিক তখনই জিএইচআই-এর তালিকায় দেখা যাচ্ছে ১২৩ টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান হয়েছে ১০২ নম্বরে। বিষয়টি নিঃসন্দেহে লজ্জার। গত বছরের তুলনায় র্যাঙ্কিং-এর দিক থেকে বিশেষ কোনো পরিবর্তন হয়নি। বর্তমানে ভারতের জিএইচআই স্কোর হলো ২৫.৮, যা ‘সিরিয়াস’ বা 'গুরুতর' ক্ষুধা স্তরের আওতায় পড়ে। এই করুণ পরিস্থিতি পুষ্টিজনিত সংকটের এক তীব্রতাকে তুলে ধরে। একদিকে ভারতের অর্থনৈতিক সাফল্য এবং অন্যদিকে পুষ্টিজনিত সংকট- 'এ' এক অদ্ভুত বৈপরীত্য।
এপ্রিল, ২০২৫-এ বিশ্বব্যাংকের ‘পভার্টি অ্যান্ড ইক্যুইটি ব্রিফ’ নামের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। সেই রিপোর্ট জানাচ্ছে, ভারতে চরম দারিদ্র্য উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। দেশের বহু মানুষ এখন ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক নির্ধারিত আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যরেখা (দৈনিক ২.১৫ ডলার) থেকে উপরে উঠে এসেছেন। রিপোর্টে আরও বলা আছে - এই দারিদ্র্যরেখার উপরে উঠে আসার ঘটনা মানুষকে ন্যূনতম জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় ক্রয়ক্ষমতা জুগিয়েছে । দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং কার্যকর সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি গ্রহণের ফলেই নাকি এমনটি সম্ভব হয়েছে! তবে এটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনগণের ন্যূনতম খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের একটি ইতিবাচক ছবি তুলে ধরছে।
এ বছরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য হলো, খাদ্য উৎপাদনে উদ্বৃত্ত দেশ ভারত জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম -এর সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির মূল লক্ষ্য হলো, দেশের বৃহৎ খাদ্যশস্যের মজুদ ভান্ডারকে কাজে লাগিয়ে এশিয়া ও আফ্রিকার খাদ্য নিরাপত্তাহীন মানুষদের কাছে খাদ্যশস্য সরবরাহ করা এবং প্রযুক্তিগত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ওই দেশগুলির খাদ্য ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করা। এর মাধ্যমে ভারত বিশ্বব্যাপী খাদ্য সুরক্ষার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিজেকে এক নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে।
অপুষ্টি ও ক্ষুধার বৈপরীত্য
এখানেই একাধিক প্রশ্ন ভিড় করে আসে। একদিকে দারিদ্র্য কমছে, অন্যদিকে দেশের উদ্বৃত্ত খাদ্য ভিন দেশের জনগণের খিদে মেটাচ্ছে – তবু কেন দেশের একটি বড় অংশ (বিশেষত পাঁচ বছরের কম বয়সিরা) অপুষ্টিতে ভুগছে? কেনই বা ক্ষুধা তালিকায় ভারতের স্থান এত নিচে? এই প্রশ্নগুলির উত্তর খোঁজার আগে জেনে নেওয়া যাক, গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স (জিএইচআই) ঠিক কোন সূচকগুলির ভিত্তিতে তৈরি হয়। এটি মূলত চারটি ভিন্ন সূচকের মাধ্যমে পুষ্টির অভাবকে পরিমাপ করে:
১. অপুষ্টি বা আন্ডার-নারিশমেন্ট: জনসংখ্যার যে অংশ অপর্যাপ্ত ক্যালরি গ্রহণ করতে বাধ্য হন।
২. শিশু অপচয় বা চাইল্ড ওয়েস্টিং: ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে যারা উচ্চতার তুলনায় কম ওজনের, যা তীব্র অপুষ্টি নির্দেশ করে। ভারতে এর হার বিশ্বব্যাপী সর্বোচ্চগুলির মধ্যে অন্যতম (প্রায় ১৮-১৯%)।
৩. শিশু খর্বতা বা চাইল্ড স্টান্টিং: ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে যারা বয়সের তুলনায় কম উচ্চতা। এটি দীর্ঘমেয়াদী অপুষ্টি নির্দেশ করে।
৪. শিশুমৃত্যু বা চাইল্ড মর্ট্যালিটি: ৫ বছর বয়স হওয়ার আগে শিশুমৃত্যুর হার, যা আংশিকভাবে অপুষ্টি এবং দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ফল।
ভারতের অপুষ্টির সূচকগুলি বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে: জনসংখ্যার মধ্যে অপুষ্টির হার (১২.০%) সেই অর্থে তুলনামূলকভাবে কম। তবে, দীর্ঘমেয়াদী অপুষ্টি (শিশু খর্বতা) এবং তীব্র অপুষ্টি (শিশু অপচয়)-এর হার যথাক্রমে ৩২.৯% এবং ১৮.৭%— যা অত্যন্ত বেশি। ভারতের এই নিম্ন র্যাঙ্কিংয়ের মূল কারণ হলো শিশুদের মধ্যে এই উচ্চ মাত্রার অপুষ্টি, যার ফলে শিশুদের বয়সের তুলনায় উচ্চতা কম এবং উচ্চতার সাপেক্ষে ওজন কম হয়।
তবে ভারত সরকার জিএইচআই-এর এই পদ্ধতিকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ ও ‘অবৈজ্ঞানিক’ বলে বার বার তথ্য প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রকের ‘পোশন ট্র্যাকার’-এর পরিসংখ্যানকে ঢাল হিসেবে তুলে ধরেছে। এই তথ্য অনুযায়ী, শিশু অপচয়ের ৬% থেকে ৭.২%-এর মধ্যে, যা জিএইচআই-এর দেওয়া তথ্যের তুলনায় অনেক কম। তবে, জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা ৫-এর মতো অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত সমীক্ষাও দেশের মধ্যে অপুষ্টির ব্যাপকতা তুলে ধরেছে, যেখানে শিশু অপচয়ের হার ১৯.৩%।
অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং খাদ্য উৎপাদনে উদ্বৃত্ত থাকা সত্ত্বেও ভারতে কেন ‘শিশু অপচয়’ এবং ‘শিশু খর্বতা’-র হার এত বেশি? এর উত্তরে বলা যায়, ভারত যে খাদ্য উৎপাদনে উদ্বৃত্ত সৃষ্টি করেছে সেই খাদ্য পুষ্টিকর নয়। দেশে ফল, সবজি, ডাল এবং প্রাণিজ প্রোটিনের মতো পুষ্টিকর খাদ্যের অভাব রয়েছে। এছাড়াও, খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থায় দুর্বলতা, পুষ্টিগত বৈষম্য এবং অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ বড় সমস্যা। দূষিত জল বা অপরিচ্ছন্নতা শিশুদের পুষ্টি শোষণে বাধা দেয় এবং রোগ বাড়ায়, যা তাদেরকে অপুষ্টির দিকে ঠেলে দেয়। শিশুমৃত্যু ও অপুষ্টির একটি অন্যতম কারণ হল দুর্বল মাতৃস্বাস্থ্য । অপুষ্টিতে ভোগা মায়ের সন্তান প্রায়শই কম ওজন নিয়ে জন্মায়, যা শিশু অপচয়ের হারকে বাড়িয়ে তোলে।
বিশ্ব ব্যাঙ্কের তথ্য দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের এবং দারিদ্র্য হ্রাসের (ন্যূনতম আয়ের ভিত্তিতে) ছবি তুলে ধরলেও, এটি খাদ্যের পুষ্টিগত গুণমান, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার মতো কাঠামোগত চ্যালেঞ্জগুলিকে পরিমাপ করে না। অন্যদিকে জিএইচআই দারিদ্র্য বা খাদ্যের সহজলভ্যতার পরিবর্তে অপুষ্টির শারীরিক প্রভাব-কে দেখে। ফলে ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের দারিদ্র্য হ্রাস দিয়ে জিএইচআই-এর স্কোরকে ব্যাখ্যা করা কঠিন। জিএইচআই-এর স্কোরে ভারত পিছিয়ে আছে কারণ দেশে শিশু অপচয় এবং শিশু খর্বতার হার খুব বেশি। এটি শুধু ‘পেট ভরা’ আছে কি না তা দেখে না, বরং খাদ্যের পুষ্টিগত মান এবং শিশুদের স্বাস্থ্যগত অবস্থা ঠিক আছে কিনা তা পর্যালোচনা করে। অর্থাৎ, জিএইচআই-এর তথ্য স্বাস্থ্য ও পুষ্টির কাঠামোগত চ্যালেঞ্জগুলি তুলে ধরে, যা শুধু অর্থনৈতিক বৃদ্ধি দিয়ে মোকাবিলা করা যায় না। ভারতের জিএইচআই স্কোর থেকে একটা জিনিস স্পষ্ট—অভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদিত উদ্বৃত্ত খাদ্য ও পুষ্টির সঠিক বিতরণ এখনো দেশের কাছে একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
প্রতিবেশী দেশগুলি জিএইচআই-এ এগিয়ে
জিএইচআই-এর তালিকায় ভারতের প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কা, নেপাল এবং বাংলাদেশের র্যাঙ্ক যথাক্রমে ৬১, ৭২ এবং ৮৫। সেখানে ভারতের র্যাঙ্ক ১০২। এই দেশগুলিতে তীব্র রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক ডামাডোল সত্ত্বেও জিএইচআই-এর তালিকায় এরা ভারতের চেয়ে অনেক উপরে। তার কারণ খুঁজলে দেখা যাবে— এই দেশগুলিতে দলমত নির্বিশেষে জনস্বাস্থ্য, প্রাথমিক শিক্ষা এবং পুষ্টির মতো মৌলিক সামাজিক কর্মসূচিগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। দেশগুলিতে জনস্বাস্থ্যে ধারাবাহিক বিনিয়োগের আন্তরিক প্রচেষ্টা রয়েছে। যেমন শ্রীলঙ্কা শক্তিশালী জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও উন্নত দারিদ্র্য-পর্যবেক্ষণের ওপর জোর দিয়েছে। এই সুসংহত কাঠামো দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক ধাক্কাতেও পুষ্টি সূচকগুলিকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে। নেপাল ও বাংলাদেশ তাদের গ্রামীণ স্বাস্থ্যকর্মী (ফিল্ড ওয়ার্কার) নেটওয়ার্ক-এর মাধ্যমে পুষ্টি ও স্যানিটেশন সংক্রান্ত বার্তাগুলি সরাসরি পিছিয়ে পড়া পরিবারগুলির কাছে পৌঁছে দিতে সফল হয়েছে।
প্রতিবেশী দেশগুলির এই 'গ্রাউন্ড লেভেল (মাঠ পর্যায়ের)' ও সরাসরি সংযোগের মডেল তাদের দ্রুত সাফল্য এনে দিয়েছে যা ভারতের জন্য শিক্ষণীয়।
জিএইচআই-এ সাফল্যের মডেল: চীন, তুরস্ক, বেলারুশ
চীন, তুরস্ক এবং বেলারুশ জিএইচআই-এ ‘খুব কম ক্ষুধার’ বিভাগে উঠে আসতে সক্ষম হয়েছে (স্কোর ৫-এরও নিচে)। তাদের সাফল্যের মূল ভিত্তি হলো; দ্রুত অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, সুনির্দিষ্ট সরকারি নীতি ও সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা - এই তিনটির মধ্যে একটি শক্তিশালী সমন্বয়।
চীন অর্থনৈতিক রূপান্তরের পাশাপাশি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিতে লক্ষ্যভিত্তিক দারিদ্র্য দূরীকরণ কর্মসূচিতে বিপুল বিনিয়োগ করেছে। তারা শুধু ক্যালরি নয়, ডায়েটারি বৈচিত্র্য নিশ্চিত করার ওপরও জোর দিয়েছে। অন্যদিকে, তুরস্ক সামাজিক সুরক্ষা নেটওয়ার্ক (খাদ্য ভাউচার, নগদ অর্থ সহায়তা) -এর মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবাকে সবার জন্য সহজলভ্য করে তুলেছে। তারা গর্ভবতী মা ও শিশুদের পুষ্টি ও স্বাস্থ্য সচেতনতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। বেলারুশ, শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ এবং সামাজিক সমতা-কে ব্যবহার করে খাদ্যের সহজলভ্যতা ও স্থিতিশীলতা বজায় রেখেছে । এছাড়া উচ্চ সাক্ষরতার হার এবং উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবার কারণে শিশু অপুষ্টির হার দেশটিতে অত্যন্ত কম।
এই দেশগুলির সাফল্য প্রমাণ করে যে, রাজনৈতিক সদিচ্ছা, লক্ষ্যভিত্তিক সামাজিক বিনিয়োগ এবং নীতির সংযোগ (স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন, পুষ্টি) অপুষ্টি দূরীকরণের জন্য অপরিহার্য।
ভারতের উদ্যোগ, তবু দুর্নীতির ফাঁদ
ভারত সরকার জিএইচআই-এ উন্নতি সাধনের লক্ষ্যে শিশু পুষ্টির দিকে মনোযোগ দেয়নি তা নয়! পোষণ অভিযান, সমন্বিত শিশু উন্নয়ন পরিষেবা (আই সি ডি এস ), জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন, স্বচ্ছ ভারত মিশন এবং জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন (এনএফএসএ)-এর মতো কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
তবে, এই কর্মসূচিগুলি আশানুরূপ ফল দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এর মূল কারণগুলির মধ্যে অন্যতম হলো কর্মসূচির বাস্তবায়নে ব্যাপক দুর্নীতি। আই সি ডি এস-এর মাধ্যমে শিশুদের জন্য বরাদ্দ অর্থের অপব্যবহার, নিম্নমানের খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ এবং ‘লিকেজ ’-এর কারণে প্রকৃত সুবিধাভোগীদের কাছে পুষ্টি পৌঁছায় না। এনএফএসএ-এর অধীনে ভর্তুকিযুক্ত খাদ্যশস্য কালোবাজারে বিক্রি বা ওজনে কম দেওয়ার মতো ঘটনা খাদ্য সুরক্ষার চেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই দুর্নীতি স্বাস্থ্য এবং খাদ্য সুরক্ষার ব্যবস্থাকে এমনভাবে দুর্বল করে যে, অপুষ্টির চক্র ভাঙা অসম্ভব হয়ে ওঠে।
দুর্নীতির পাশাপাশি কাঠামোগত দুর্বলতাগুলিও প্রকট। ভারতের বিপুল জনসংখ্যার কারণে কোনো কর্মসূচিই দ্রুত বা সমানভাবে সমস্ত স্তরে কার্যকর করা যায় না। ভারতের নীতিগুলি ঐতিহাসিকভাবে কেবল ক্যালরি সরবরাহ (খাদ্য নিরাপত্তা)-এর ওপর বেশি জোর দিয়েছে, পুষ্টির গুণগত মান বা ডায়েটারি বৈচিত্র্যের ওপর সেই ভাবে জোর দেয়নি। এছাড়াও, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন এবং পুষ্টি কর্মসূচির মধ্যে সমন্বয়ের অভাব কাম্য সাফল্য এনে দিতে পারেনি।
সংক্ষেপে বলা যায়, ভারত পুষ্টি বৃদ্ধি কর্মসূচিতে জোর দিলেও, বাস্তবায়নের জটিলতা, প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ এবং ব্যাপক দুর্নীতির কারণে প্রতিবেশীদের মতো দ্রুত ও সুনির্দিষ্ট সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স (জি এইচ আই)-এর তালিকায় উপরে উঠতে হলে চীন, তুরস্ক বা বেলারুশের মডেল থেকে ভারতকে এই শিক্ষা নিতে হবে যে, কেবল অর্থনৈতিক বৃদ্ধিই যথেষ্ট নয়; এর জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং লক্ষ্যভিত্তিক সামাজিক বিনিয়োগ অত্যন্ত জরুরি। ভারতের প্রয়োজন হলো: বিভিন্ন নীতির মধ্যে সমন্বয় সাধন; খাদ্যের ক্যালরির বদলে পুষ্টির গুণমানের ওপর জোর দেওয়া; এবং পুষ্টি ও খাদ্য সুরক্ষার কর্মসূচিগুলিকে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগ নিশ্চিত করা। এই পদক্ষেপগুলো নিতে পারলে সাফল্য আসবেই। কেরালা মডেল তা প্রমাণ করে দেখিয়েছে।