পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

সাংস্কৃতিক বিপন্নতার শঙ্কায় ভুগছেন লাদাখিরা

  • 09 August, 2020
  • 0 Comment(s)
  • 1327 view(s)
  • লিখেছেন : মিলন দত্ত
বিশেষ মর্যাদার বিলুপ্তি এবং কাশ্মীর থেকে বিযুক্তির পরে লাদাখিদের আশঙ্কা: মারোয়ারি, গুজরাটি বা পাঞ্জাবি ব্যবসায়ীরা লাদাখে গিয়ে জমি কিনে জাঁকিয়ে ব্যবসা জমাবে না তো। রিয়াল এস্টেট ব্যবসায়ী আর হোটেল ব্যবসায়ীদের আটকাতে তাঁরা চান সংবিধানের ষষ্ঠ কিংবা সপ্তম তফশিলির অন্তর্ভুক্তি।

গত বছর ৫ অগস্ট ৩৭০ আর ৩৫এ ধারা দুটি বিলোপ করে জম্মু ও কাশ্মীর প্রদেশকে দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করে দেওয়া হয়। তারপর থেকে জম্মু ও কাশ্মীরে বহুবিধ কেন্দ্রীয় আইন ও অন্যান্য নানা আইন গ্রহণ ও কার্যকর করলেও লাদাখের ব্যাপারে কিন্তু কেন্দ্র ধীরে চলার নীতিতেই বিশ্বাস রেখেছে এখনও পর্যন্ত। গত এক বছরে দেশ জুড়ে আমরা কাশ্মীর উপত্যকার মানুষের দুভোর্গ, দুর্গতি আর দমবন্ধ অবস্থার কথা জানতে পেরেছি। নানাভাবে তা নিয়ে ছোটবড় প্রতিবাদ বা লেখালিখিও কোথাও হয়েছে। কিন্তু এই এক বছরে লাদাখের মানুষের যে কি হাল হয়েছে তা জানতে পারিনি আমরা। কোনও সংবাদ মাধ্যমও লাদাখ নিয়ে তেমন উৎসাহী বলে মনে হয় না। কেবল চিনের সেনারা কাঁটা বসানো মুগুর মেরে জনা বিশেক ভারতীয় সেনাকে মেরে ফেলার পর থেকে লাদাখ প্রায়শ উঠে আসছে খবরের শিরোনামে। জানা যাচ্ছে চিনের সেনা বাহিনী নাকি লাদাখের বিরাট অংশ দখল করে প্রায় ১৮ কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে পাকা ছাউনি ফেলে বসে রয়েছে। ভারত কিছুই করে উঠতে পারছে না।

এই খবর নিয়ে লাদাখিদের তেমন মাথা ব্যথা নেই। তাঁরা অনেক বেশি চিন্তিত এবং শঙ্কিত ৩৭০ এবং ৩৫এ ধারা বাতিল করে লাদাখকে পৃথক করার পরে মারোয়ারি, গুজরাটি বা পাঞ্জাবি ব্যবসায়ীরা লাদাখে গিয়ে জমি কিনে জাঁকিয়ে ব্যবসা জমাবে না তো। ভারতীয় মূল ভূখণ্ড থেকে হামলে পড়া রিয়াল এস্টেট ব্যবসায়ী আর হোটেল ব্যবসায়ীদের আটকাতে লাদাখিরা চান সংবিধানের ষষ্ঠ কিংবা সপ্তম তফশিলির অন্তর্ভুক্ত করা হোক তাঁদের ভূখণ্ডকে। কেন এই দাবি? তার জবাব মেলে ম্যাগসাইসাই বিজয়ী সোনাম ওয়াংচুকের গত নভেম্বর মাসের একটি বক্তব্যে। তিনি বলেছিলেন, ‘এখানকার মানুষ এখন জানতে চায় লাদাখকে যে পৃথক কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল করা হল তা কি কেবল বহিরাগতদের এখানে এনে অবাধ লুটের ব্যবস্থা করে দিতে? চিন তিব্বতে যা করেছে ভারত এখানে সেটাই ঘটাবে না তো?’ তিব্বত দখলের পর থেকে সেখানে পরিকল্পিত ভাবে চিনাদের পাঠানো হয়েছে স্থায়ী বসত করার জন্য। গোটা তিব্বতজুড়ে এখন চিনাদের একছত্র আধিপত্য।

লে এবং কারগিল জেলা মিলে নবগঠিত লাদাখ যে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, সেখানকার অধিকাংশ বাসিন্দার এটাই দাবি। লাদাখের ওই দুটোই জেলা। শিয়া মুসলমান অধ্যুষিত কারগিল আর বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ট লে। লাদাখে ১ লাখ ১৫ হাজার শিয়ার বাস আর ১ লাখ ৩৫ হাজার বৌদ্ধের বাস। এছাড়া হিন্দু, শিখ আর সুন্নি মুসলমান মিলিয়ে আরও ১০ হাজার। কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর যাঁদের আস্থা তাঁরা বলছে‌ন, ভয়ের কিছু নেই। কারণ জমির চরিত্র নির্ধারণের ক্ষমতা এখনও লাদাখ হিল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল (এলএইচডিসি)-এর হাতে। কিন্তু লাদাখের মানুষ জানে, এলএইচডিসি-র স্বায়ত্বশাসনের ক্ষমতা নিছকই কাগজে কলমে। নতুন ব্যবস্থার পরে এলএইচডিসি-র হাতে ঠিক কোন কোন ক্ষমতা আছে তা কারো জানা নেই। যেটুকু জানা আছে তা হল, এলএইচডিসি কেবল সরকারি জমি হস্তান্তর করতে পারে। বেসরকারি বা ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমি তাদের এখতিয়ারের বাইরে।

গত এক বছরে লাদাখে বড় কোনও উন্নয়নের কাজ কেউ দেখেনি। গোটা দেশ জুড়ে যখন লাদাখ সীমান্ত আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে তখনও সেখানে উন্নয়ন পৌঁছয়নি। শীতল মরুভূমি লাদাখে উন্নয়নের কাজ করার জন্য গ্রীষ্মের মাত্র কয়েকটা মাস পাওয়া যায়। বরফ গলে কাজ করার অনুকূল অবস্থার জন্য মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় থাকে না। কিন্তু এ বছর মার্চে কাজ শুরু করা যায়নি করোনার সংক্রমণের কারণে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই শরু হয়ে গেছে সীমান্ত সমস্যা ফলে সেনা তৎপরতা। বিভাজনের পরে লাদাখে এখন উন্নয়ন কতটুকু হবে তা ভবিষ্যৎ বলবে। কিন্তু এতকাল জম্মু ও কাশ্মীরের বাজেটের মাত্র ২ শতাংশ বরাদ্দ পেয়েছে যদিও গোটা রাজ্যে ৬৫ শতাংশ এলাকা জুড়ে ছিল লাদাখ। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী লাদাখের জন্য একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন করেছেন, সেটা সেন্টার ফর বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ হিসেবে গড়ে তোলা হবে বলে জানা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাইলে লাদাখের ছাত্রছাত্রীদের কয়েক হাজার মাইল পাড়ি দিতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন হলে সেই সুরাহাটুকু অন্তত হবে।

সবকিছু ছাপিয়ে লাদাখের মানুষের সবচেয়ে বড় আশঙ্কা: বিশেষ মর্যাদা বিলোপের পরে বহিরাগতদের অবাধ আগমণ এবং রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা ফেঁদে বসা। তবে কেন্দ্রীয় সরকারি আনুকূল্যে লাদাখে উন্নয়ন শুরু হলে এবং তার জন্য বিপুল বরাদ্দ ঢুকতে শুরু করলে সেটাও যে লাদাখিদের জন্য ভাল হবে না সে আশঙ্কাও রয়েছে। তাতে তাদের ‘লাদাখি সংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য এবং লাদাখি পরিচিতি’ বিপন্ন হতে পারে। লাদাখিদের রয়েছে একটা একান্ত নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিচিতি— সাথানীয় বৌদ্ধ মুসলিম মির্বিশেষে।

লাদাখে বহিরাগত প্রবেশ রোধে এখনই যদি কোনও বিশেষ ক্ষমতায়নের কথা কেন্দ্র বিবেচনা না করে তাহলে সেখানে বড় ধরণের অসন্তোষ তৈরি হতে পারে। সেই বিক্ষোভে কেবল লে অঞ্চলের বৌদ্ধরা সামিল হবে না, কারগিলের শিয়ারাও যোগ দেবেন।

0 Comments

Post Comment