পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

আগামী বিরোধী দলগুলোর বৈঠকে কি মমতা বিরোধিতার কানাগলি থেকে বেরোতে পারবে, বাংলার সিপিআইএম?

  • 22 June, 2023
  • 0 Comment(s)
  • 917 view(s)
  • লিখেছেন : কল্যাণ সেনগুপ্ত
সিপিআইএম দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব চায়, মোদী বিদায় নিক। কারণ তারা বোঝে মোদী ২৪ সালে আবার জিতলে দেশের পরিস্থিতি কি হতে পারে বা কত বড় সর্বনাশ হতে পারে। দেশে আর ভোট নাও হতে পারে। কারণ হিন্দু চোল রাজতন্ত্রের প্রতীক সেঙ্গল প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে মোদী প্রমাণ করেছেন যে, তিনি তীব্রভাবে হিন্দু রাষ্ট্র ও রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে। আর রাজতন্ত্রে যে গণতন্ত্রের স্থান নেই, সেটা তো সবারই জানাা, কিন্তু বাংলার সিপিআইএম কি তা বোঝে?

 
সিপিএম রাজ্য নেতৃত্বের দীর্ঘকালের জেঁকে বসা ক্ষমতা হারানোর কারণে অদমনীয় এক জিঘাংসা এবং মমতার উপূর্য্যপুরি  সাফল্যের ফলে রাজ্য সিপিএম নেতৃত্বের ক্রোধান্ধ আচরণ, সম্পূর্ন নীতিবোধ বর্জিত। সে কারণেই মোঃ সেলিমের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সিপিএম দল আর ঐ দলেরই জাতীয় নেতৃত্বের দৃষ্টিভঙ্গির বিস্তর ফারাক নজরে আসছে আসন্ন ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। কারণ, সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব এতই বেশী তৃণমূল বিরোধী যে, ২৪এর আসন্ন ভোটে বিজেপি বিরোধিতার চেয়েও তৃণমূল বিরোধিতায় অধিক মনোযোগী। অবশ্য এটা স্পষ্ট নয় যে আগামী বিরোধী ঐক্যের আলোচনায় কোন আসন সমঝোতার উদ্যোগ বাংলায় আদৌ হবে কিনা?

বাংলায় সমঝোতার আশা বেশ কম। কারণ মমতা বোঝে, রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনে সাগরদিঘির ফর্মুলায় ভোট করা অসম্ভব। ফলে ত্রিমুখী লড়াই হলে তৃণমূলেরই লাভ সর্বাধিক। আর সমঝোতা হলেও ২/৪টির বেশি আসন তো তৃণমূল ছাড়বেনা এবং বাকি আসনে বাম কংগ্রেসের সব ভোট বিজেপির ঝুলিতেই যাবে চূড়ান্ত মমতা বিরোধী মনোভাব থেকে। এ বিষয়গুলো কারোরই অজানা নয়। তবু যদি কোনরকম সমঝোতা হয়, তা হবে স্রেফ জাতীয় রাজনীতি ও মোদীকে হারানোর স্বার্থে।

রাজ্যের সিপিএম নেতারা মুখে বলে আমরা তৃণমূল ও বিজেপি দুই দলের বিরুদ্ধেই লড়বো, কিন্তু সবাই বোঝে এদের প্রথম ও প্রধান শত্রু মমতা। সেজন্যই এরা বক্তব্য রাখতে গিয়ে সিংঘভাগই বলবে তৃণমূলের বিরুদ্ধে আর নিয়মরক্ষার খাতিরে দু একটি কথা বলবে বিজেপির বিরুদ্ধে। বিজেপিকে বেশি চটালে তো চলবেনা, কারণ মমতাকে হেনস্তা করতে বা সরকার ফেলতে তো মোদীই একমাত্র ভরসা।  আর মমতা সরকারের বিদায়ের চেয়ে ভাল  আর কোন কিছুই সেলিম, সুজনদের কাছে হতে পারে না। তাদের নিজেদের দ্বারা যে কিছু হবার নয়, সে তারা খুব ভালো ভাবে জানে। ফলে মোদীই একমাত্র ভরসা।

বর্তমানে যে আচরণ সিপিএম করছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে, অতীতে সেই একই রকম আচরণ করেছে কংগ্রেসেরও বিরুদ্ধে। ইন্দিরা গান্ধীকে ডাইনি বলে দেওয়াল লিখেছে, রাজিব গান্ধীকে বোফর্স চোর বলে গলিতে গলিতে মিছিল করেছে, দিনের পর দিন লোকসভায় হল্লা করেছে বিজেপির সাথে। কংগ্রেসকে ঠেকাতে ভিপি সিংয়ের সরকারকে সমর্থন করেছে বিজেপির সাথে মিলে। আর সেই কংগ্রেসই এখন পরম বন্ধু, বাঁচা মরার সাথী। প্রয়োজনে ভবিষ্যতে যে মমতারও পা ধরবেনা তেমন কোন নিশ্চয়তা কিন্তু নেই। ধরা যাক, ২৪এ মোদী হেরে গেল এবং মমতার ক্ষমতা আরও বেড়ে গেল, তখন এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হলেও হতে পারে। রাজনীতিতে কিছুই অসম্ভব নয় বা শেষ কথা বলে কিছু হয়না।

সিপিআইএম দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব চায়, মোদী বিদায় নিক। কারণ তারা বোঝে মোদী ২৪ সালে আবার জিতলে  দেশের পরিস্থিতি কি হতে পারে বা কত বড় সর্বনাশ হতে পারে। দেশে আর ভোট নাও হতে পারে। কারণ হিন্দু চোল রাজতন্ত্রের প্রতীক সেঙ্গল প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে মোদী প্রমাণ করেছেন যে, তিনি তীব্রভাবে হিন্দু রাষ্ট্র ও রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে। আর রাজতন্ত্রে যে গণতন্ত্রের স্থান নেই, সেটা তো সবারই জানা। তাঁর আচার আচরণ সবই মহারাজ বা সম্রাট সুলভ। তিনি তাঁর বুদ্ধি ও খুশিমতো দেশ চালাতেই অভ্যস্ত। তিনি তাঁর কাজের কোন প্রকার কৈফিয়ত দিতে বা সমালোচনা শুনতে চান না। যেভাবে রাহুল গান্ধীর সংসদ পদ বাতিল করা হলো, তা এক অভাবনীয় ও অভূতপূর্ব ঘটনা। সংসদে দাঁড়িয়ে আদানি ও মোদীর সম্পর্ক নিয়ে যেভাবে অস্বস্তিকর প্রশ্ন করেছেন, তারই মূল্য চোকাতে হলো রাহুল গান্ধীকে। এধরনের বেয়াড়া প্রশ্ন যে তিনি আদৌ বরদাস্ত করবেন না, সেটাই তিনি সবাইকে বুঝিয়ে দিলেন স্পষ্টরূপে। এসব কারণেই তিনি শুধু 'মন কি বাত' শোনাতে চান, কিন্তু কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে চান না এবং তিনি কোন সাংবাদিক সম্মেলন করেন না, যা গণতন্ত্রের এক অপরিহার্য্য অঙ্গ। অত্যন্ত সুকৌশলে তিনি একটু একটু করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে চলেছেন। এই বিপদটা কিন্তু সেলিম, সূজনরা মানতে চান না, তাদের কাছে মমতাই নাকি দেশের সামনে সবচাইতে বড় বিপদ! এর চেয়ে বড় নীতি ভ্রষ্টতা আর কি হতে পারে?

২০২১এর ভোটে রাজ্য সিপিএম নেতাদের খুব আশা ছিল যে, মমতা হারবে আর বিজেপি আসবে। সেটা মাথায় রেখেই মোঃ সেলিম তড়িঘড়ি ছুটে গিয়ে হায়দ্রাবাদী মিম অনুগামীদের সেকুলার নাম দিয়ে বানালেন ISF বা ইন্ডিয়ান সেলুলার ফ্রন্ট বহুমুখী উদ্দেশ্যে। এক তো মমতার প্রতি মুসলমানদের সমর্থনকে যতবেশি সম্ভব কমিয়ে আনা এবং ISF অনুগামী সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন সমর্থকদের দিয়ে আন্দোলনের নামে যত বেশি সম্ভব মার দাঙ্গা ও হিংসাত্মক ঘটনা ঘটানো সম্ভব, সেটা করে একটা অংশের মুসলমানদের সরকার বিরোধী অবস্থানে নিয়ে যাওয়া। মমতাকে হারাতে সবরকম কৌশল প্রয়োগ করে এবং নিজেদের প্রায় নিঃস্ব করে দিয়ে বিজেপিকে তলায় তলায় পুরো সমর্থন দেবার ব্যবস্থা করেছিল সিপিএম। নইলে নিজেদের ভোট কখনো ৫%এর নিচে নামে? আরও অকাট্য প্রমাণ হচ্ছে, '২১এর ভোটে যে 'নো ভোট টু বিজেপি' প্রচার আন্দোলন হয়েছিল, তাকে কেন সিপিএম তৃণমূলের দালাল বলে গাল পারলো? তাদের বিজেপিকে জেতানোর কৌশল ভেস্তে গেল বলে কি? আগামী '২৪এর ভোটও এর অন্যথা হবে বলে মনে হয় না। কারণ গোটা দেশের গণতন্ত্র প্রিয় মানুষের কাছে এই ভোট যখন জীবন মরণ সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে, তখন সিপিএম চায়, বিজেপি জিতুক এবং মমতাকে হটাক। এরা মুখে না বললেও মনে মনে কায়মনোবাক্যে চায় যে '২৪এ মোদীই জিতুক, নইলে মমতাকে হটাবে কে? এতখানি নির্লজ্জ্ব ও ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থ সম্পর্কিত এবং দেশের মানুষের স্বার্থ বিরোধী চরম ক্ষতিকর ও নীতিহীন মনোভাবকে ধিক্কার জানাবার ভাষা নেই।

আমরা দেখছি, সিপিএম দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি 'আপ' দলের উপ মুখ্যমন্ত্রী সহ দুই গুরুত্বপূর্ন মন্ত্রীকে জেলে ঢোকানো এবং রাজ্য পরিচালনায় সরকারের আমলাকুলকে নিয়ন্ত্রণের জন্য সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশকে অমান্য করে অর্ডিন্যান্স জারি করার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে অস্বীকার বা ধ্বংস করার বিরুদ্ধে মমতা ব্যানার্জির মতোই সমান বিরোধিতা করেছেন। এবার পাটনায় অবিজেপি দল সমূহের বৈঠকে একইসাথে মমতা এবং ইয়েচুরি সাহেবও বসবেন আশাকরি। সবাই এটা বোঝে যে, নেতৃত্ব বা ক্ষমতার প্রশ্নে অবিজেপি দল সমূহের মধ্যে যতই অন্তর্বিরোধ থাকুক না কেন, কংগ্রেস ও বিভিন্ন আঞ্চলিক দল সমূহের (সব না হলেও বেশির ভাগ) মধ্যে নূন্যতম বোঝাপড়া না হলে মোদীকে পরাস্ত করা সম্ভবই নয়। আর ২০২৪এ আবার মোদীর জয় মানে দেশের সংবিধান, গণতন্ত্র ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ধ্বংসের সাথে সাথে সমস্ত বিরোধী শক্তিকে ধীরে ধীরে শক্তিহীন করে পদানত হতে বাধ্য করা। প্রতিষ্ঠিত হবে বকলমে রাজতন্ত্র,  চলবে আদানির লাগামহীন শোষণ এবং এসবকে আড়াল করতে হিন্দুত্বের ললিপপ খাওয়ানো হবে দেশের মানুষকে। এর পরিণতিতে অবশ্যাম্ভাবীরূপে শুরু হবে গৃহযুদ্ধ, ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি ও প্রাণনাশ। টুকরো টুকরো হবে দেশ এবং সর্বাগ্রে হবে  উত্তর ভারত ও দক্ষিণ ভারতের বিভাজন। এসব কারণেই বিরোধী ঐক্য জরুরি ও বোঝাপড়া আবশ্যিক। কিন্তু রাজ্য সিপিএম নেতৃত্ব কি তা মানবে?

সেলিম, সুজনরা যতদিন দলের নেতৃত্বে থাকবে ততদিন এই দলের কোন উন্নতি হবে না। অতীতের ভুল স্বীকার বা শোধরানোর কোন চেষ্টাই নেই। ফলে দলের শ্রীবৃদ্ধিরও কোন আশা নেই। মিটিং মিছিলে জনসমাগমের বৃদ্ধি ঘটলেও ভোটের বাক্সে তার প্রতিফলন এত সহজে হবেনা। এরা এটাও বুঝতে চায়না যে, মোদী হারলে এরাজ্যে প্রধান বিরোধী শক্তি হয়ে ওঠার সুযোগ একমাত্র তাদেরই আছে। কিন্তু তারা দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় সম্ভবত রাজী নয়, তারা চায় যেকোন ভাবে ও যেকোন মূল্যে মমতা অবিলম্বে বিদায় নিক। কিন্তু রাজ্যের রাজনীতি তো তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী চলবেনা, ফলে ধৈর্য ধরে গণতান্ত্রিক ও অহিংস পথে আন্দোলন করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। এবং এই পথেই তাদের এগোতে হবে। অতীতের অন্ধ কংগ্রেস বিরোধিতার মতোই বর্তমান অন্ধ মমতা বিরোধিতা দলের জন্য কোন সুফল আনতে পারবেনা এবং এবিষয়ে তাদের আদৌ কোনদিন শুভবুদ্ধির উদয় হবে কিনা, বলা মুশকিল।

0 Comments

Post Comment