পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

প্রত্যাশা মতই মরক্কোর অশ্বমেধের ঘোড়াকে থামিয়ে বিশ্বকাপ ফাইনালে আর্জেটিনার মুখোমুখি ফ্রান্স

  • 15 December, 2022
  • 0 Comment(s)
  • 955 view(s)
  • লিখেছেন : দেবাশিস মজুমদার
সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে ৩-০ গোলে হারিয়ে বিগত বিশ্বকাপে একই ব্যবধানে ক্রোয়েশিয়ার কাছে গ্রুপের ম্যাচে হারের শোধ তুলে নিয়েছেন মেসি-আলভারেজরা, এবারে ফাইনালে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে কাতার বিশ্বকাপের ফাইনাল ফ্রনটিয়ারে আর্জেন্টিনা কিভাবে নিজেদের ফুটবলযুদ্ধের লড়াইয়ে কিভাবে প্রতিভাত করে তা প্রত্যক্ষ করতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা রত বিশ্বজুড়ে থাকা আর্জেন্টিনার সমর্থক ফুটবল প্রেমী মানুষ। অন্যদিকে প্রতিভা সমৃদ্ধ দিদিয়ের দেশঁ-র দলও বিশ্বকাপ জিতে ফ্রান্সের ফুটবল ইতিহাসে অনন্য নজির সৃষ্টি করতে মরিয়া লড়াই চালাবে তা বলাই বাহুল্য।

কাতার বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে আর কোনও অঘটন ঘটাতে পারল না মরক্কো। তাদের স্বপ্নের দৌড় থমকে গেল ফ্রান্সের বিরুদ্ধে। প্রত্যাশা মতই ২-০ গোলে মরক্কোকে হারিয়ে ফাইনালে মেসিদের প্রতিপক্ষ হিসাবে নিজেদের জায়গা নিশ্চিত করে নিলেন অলিভার জিরোউ, কিলিয়ান এমবাপে রা। একসময়ের ফরাসি কলোনি মরক্কোর এই কাতার বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া দলের অনেক খেলোয়াড়েরই জন্ম ইউরোপে এবং বিশেষভাবে তাদের কেউ কেউ জন্মগ্রহণ করেছেন ফ্রান্সেই। অন্যদিকে এথনিক আইডেনটিটির দিক থেকে এই ফরাসি ফুটবল দলকেও অনায়াসেই আন্তর্জাতিক পরিচিতি সম্পন্ন দল বলে চিহ্নিত করা যায়। তবে প্রত্যাশা মতই ফ্রান্সের মরক্কোর বিরুদ্ধে এই ২-০ গোলে জয়লাভ। তবে যে হিসাবে দুই কোচ দল সাজিয়েছিলেন তাতে ৪-৫-১ ছকে খেলা শুরু করা দিদিয়ের দেশঁর ফ্রান্স আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতেই ম্যাচ শুরু করেছিল অন্যদিকে ৫-৪-১ ছকে শুরু করা মরক্কো প্রত্যাশা অনুযায়ী রক্ষণাত্মকভাবে খেলা শুরু করেছিল। তবে আহত আনফিট মরক্কো অধিনায়ক রোমেইন সেইসকে শুরুতে মাঠে নামানো নিঃসন্দেহে কোচ ওয়ালিদের একটি ট্যাকটিক্যাল ভুল। সেই ভুলের খেসারত হিসাবেই ম্যাচের প্রথম পাঁচমিনিটের মধ্যেই গোল হজম করতে হল মরক্কোকে। ভারানের ডিফেন্স চেরা এক থ্রু-পাস থেকে গ্রিজম্যানের সেন্টার থেকে মরক্কোর রক্ষণ দেওয়ালে প্রতিহত হওয়া বল অরক্ষিত থাকা হার্নান্ডেজের পায়ে পৌছলে দারুণ এক এক্রোবেটিক শটে বল জালে জড়িয়ে দেন হার্নান্ডেজ। তারপর সেইসকে সেই বদল করতে বাধ্যই হন মরক্কোর কোচ এবং এই দ্রুত হয়ে যাওয়া প্রথম গোলের পর থেকেই মরক্কো আর ফ্রান্স নিজেদের ভূমিকা অদল-বদল করে নেয়। মরক্কো গোলশোধের জন্য মরিয়া হয়ে আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়ায় আর প্রতি-আক্রমণ ভিত্তিক রক্ষণ সামলে আক্রমণে ওঠার খেলা খেলতে শুরু করে ফ্রান্স। প্রথমার্ধ ও দ্বিতীয়ার্ধে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সেভ করলেন ফ্রান্সের গোলরক্ষক হুগো লরিস এবং কিছুটা খেলার গতির বিপক্ষে দূর্দান্ত সংঘবদ্ধ দ্রুত গতির প্রতি-আক্রমণ থেকে ফ্রনাসের হয়ে দ্বিতীয় গোল করে ফরাসিদের বশ্বকাপ ফাইনালে প্রবেশ নিশ্চিত করে দেন রান্ডাল কোলো মুয়ানি।

মরক্কো তাদের পরিকল্পনায় যথেষ্ঠই সফল ছিল। এমবাপে আর জিরোউকে কড়া নজরে রেখে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে দুজনকেই যথেষ্ঠ নিস্তেজ করে রাখল মরক্কোর রক্ষণভাগের খেলোয়াড়রা। কিন্তু ফ্রনাসের এই দলটার রিজার্ভ বেঞ্চও যথেষ্ঠ ভালো এবং দলে প্রতিভার কোনও অভাব নেই। সেইসঙ্গে বহুদিন পরে নিজের ফর্ম ফিরে পেলেন আতোয়াঁ গ্রিজম্যান। ফলে ফ্রান্সকে রুখে দেওয়া সম্ভব হল না মরক্কোর। যথেষ্ঠ সম্মানজনক লড়াই করে আফ্রিকান ফুটবল দল হিসাবে ফিফা বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পৌছে ইতিহাস সৃষ্টি করে অবশেষে তাদের অশ্বমেধের স্বপ্নের দৌড় থামালো মরক্কো। তবে এখনও তাদের শেষ লড়াই বাকি আছে। তৃতীয় স্থান অর্জনের জন্য তাদের ১৭ ডিসেম্বর লড়তে হনে লুকা মডরিচের ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে। অন্যদিকে কাতার বিশ্বকাপের কাপ জয়ের শেষ লড়াইয়ে ১৮ ডিসেম্বর মুখোমুখি হবে ফুটবলবিশ্বের দুই মহাশক্তি আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স। আর্জেন্টিনা যেমন লায়োনেল মেসিকে বিশ্বকাপ জয়ী হিসাবে দেখতে এবং তৃতীয়বারের জন্য এলবিসেলেস্তে জার্সিকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করার জন্য মহাসংগ্রামে অবতীর্ণ হবে ঠিকই একইভাবে তৃতীয়বারের জন্য ফুটবলবিশ্ব জয়ের লক্ষ্যে ঝাঁপাবেন গ্রিজম্যান, জিরৌউ, এমবাপেরা। শুধু তৃতীয়বারের জন্য বিশ্বকাপ জয়ই নয় ফ্রান্সের লক্ষ্য থাকবে ফাইনাল জিতে নিজেদের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন তকমা ধরে রাখা এবং ইতালি (১৯৩৪, ১৯৩৮) এবং ব্রাজিল (১৯৫৮,১৯৬২)-এর মত পরপর দুটি বিশ্বকাপ জয়ের বিরল রেকর্ডের ভাগীদার হওয়া। ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপে নক-আউট পর্যায়ে ফ্রনাসের কাছেই ৩-৪ গোলে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল মেসিবাহিনীকে। সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে ৩-০ গোলে হারিয়ে বিগত বিশ্বকাপে একই ব্যবধানে ক্রোয়েশিয়ার কাছে গ্রুপের ম্যাচে হারের শোধ তুলে নিয়েছেন মেসি-আলভারেজরা, এবারে ফাইনালে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে কাতার বিশ্বকাপের ফাইনাল ফ্রনটিয়ারে আর্জেন্টিনা কিভাবে নিজেদের ফুটবলযুদ্ধের লড়াইয়ে কিভাবে প্রতিভাত করে তা প্রত্যক্ষ করতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা রত বিশ্বজুড়ে থাকা আর্জেন্টিনার সমর্থক ফুটবল প্রেমী মানুষ। অন্যদিকে প্রতিভা সমৃদ্ধ দিদিয়ের দেশঁ-র দলও বিশ্বকাপ জিতে ফ্রান্সের ফুটবল ইতিহাসে অনন্য নজির সৃষ্টি করতে মরিয়া লড়াই চালাবে তা বলাই বাহুল্য। সব মিলিয়ে কাতার বিশকাপ ফাইনালে আর্জেন্টিনা বনাম ফ্রান্সের লড়াই উচ্চ পর্যায়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফুটবল প্রতিদ্বন্দ্বিতার সাক্ষ্য রেখে যাবে তা আশা করাই যায়। ফুটবলের মাধ্যমে সারা বিশ্বের ঐক্যবদ্ধকরণের ডাক দিয়ে ফিফা যে মহাযজ্ঞের অনুষ্ঠান আয়োজিত করেছে ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ হিসাবে কাতারের মাটিতে তার চূড়ান্ত রোমাঞ্চকর প্রকাশ দেখার জন্য ফুটবলবিশ্বের আপামর ফুটবলপ্রেমী মানুষকে প্রতীক্ষা করে থাকতে হবে ১৮ ডিসেম্বর ফাইনাল ম্যাচের মহালড়াইয়ের অবতারণা পর্যন্ত।

0 Comments

Post Comment