বারংবার অঘটন ঘটেই চলেছে কাতার বিশ্বকাপে। প্রথম রাউন্ডের তৃতীয় পর্বে অঘটনের ঘনঘটা আরও তীব্র। একের পর এক প্রেডিকশান উল্টে যাচ্ছে। কার্যত প্রতিটা ম্যাচই প্রায় হতবাক করে দিচ্ছে তাদের ফলাফলে। গতদিন স্পেনকে হারিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল জাপান। এদিন স্পেনের প্রতিবেশী পর্তুগালকে একইভাবে হারিয়ে শেষ ষোলোয় নিজেদের জায়গা করে নিল জাপানের প্রতিবেশী পূর্ব এশিয়ার দেশ এবং বিশ্বকাপ ফুটবলের মঞ্চে সবচেয়ে ধারাবাহিক দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। ম্যাচে পর্তুগালই প্রত্যাশা মত শুরুর সাথে সাথেই ছন্দবদ্ধ আক্রমণ তুলে খেলার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই রিকার্ডো হোর্তার গোলে এগিয়ে যায়। কিন্তু প্রথমার্ধেই পাল্টা আঘাত হানে কোরীয়রা। কিন-ইওন গুন সমতা ফেরান খেলার ২৭ মিনিটে। দ্বিতীয়ার্ধেও চলে তুল্যমূল্য লড়াই। শেষে ইনজুরি টাইমের শুরুতেই এই থ্রিলারের অবসান হয় যখন জ্বলে ওঠে ৭ নম্বর জার্সি। না পর্তুগালের অধিনায়ক বিখ্যাত সি-আর সেভেন নন। অনেক কম বিখ্যাত দক্ষিণ কোরীয় অধিনায়ক ও তাদের ৭ নম্বর জার্সির অধিকারী এইচ সন। প্রতি-আক্রমণে নিজেদের পেনাল্টি বক্স থেকে দুর্দান্ত এক দৌড়ে সকলকে পিছনে ফেলে বল নিয়ে বিপক্ষ পেনাল্টি বকে পৌছে ঠিকানা লেখা পাস বাড়ান যার থেকে গোল করতে ভুল করেননি হোয়াং হি চ্যান। ২০০২-এর এশিয়ার মাটিতে আয়োজিত হওয়া প্রথম বিশ্বকাপের পর এবারের কাতার বিশ্বকাপে এশিয়ার দলগুলি দারুণ পারফরম্যান্স করে চলেছে এখনও পর্যন্ত। জাপানের পর দক্ষিণ কোরিয়াও নিজেদের জায়গা করে নিল শেষ ষোলোয়। হারলেও পর্তুগালই এই গ্রুপ থেকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে পরের রাউন্ডে উঠল। ঘানাকে ২-০ গোলে হারিয়েও শেষ রক্ষা হল না উরুগুয়ের। তারা ম্যাচের শেষে পেনাল্টি না পাওয়ার জন্য ক্ষোভ উগরে দেন রেফারির বিরুদ্ধে। দক্ষিণ কোরিয়াও অবশ্য একটি ন্যায্য পেনাল্টি পাওয়া থেকে বিরত হয়েছে। ঘানার অধিনায়ক অন্যদিকে পেনাল্টি থেকেও গোল করতে ন্যররথ হন। ২০০২ সালের পর এই প্রথম বিশ্বকাপের মূলপর্বে এসেও প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিতে হল কাভানি-সুয়ারেজের উরুগুয়েকে। তাদের গোলপার্থক্যে পিছনে ফেলে পরের রাউন্ডে গেল দক্ষিণ কোরিয়া যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ ব্রাজিল।
ব্রাজিলও এদিন হেরে গেল ক্যামেরুনের কাছে। সারাটা ম্যাচে নীল জার্সি পরিহির ব্রাজিলেরই কর্তৃত্ব ছিল। প্রতি-আক্রমণ করেছে ক্যামেরুনও। কিন্তু কিছুতেই ক্যামেরুনের জালে বল জরাতে পারেনি সাম্বার দেশের খেলোয়াড়রা। নেইমার এদিনও ছিলেন গ্যালারিতে কিন্তু জ্বলে ওঠেনি সেভাবে জোগো বোনিতোর উত্তরাধিকারীরা। খেলার একেবারে শেষ লগ্নে গোল করেন ভিনসেন্ট আবুবাকার আবার পরমুহুর্তেই তিনি লাল কার্ডও দেখেন। তবে এত করেও শেষ রক্ষা হল না ক্যামেরুনের। অন্যদিকে সার্বিয়া-সুইটজারল্যান্ড ম্যাচ হল প্রবল উত্থান পতনের মধ্যে দিয়ে। জারদান সাচিরির গোলে সুইটজারল্যান্ড প্রথমে এগিয়ে গেলেও প্রথমার্ধেই স্কোর ২-১ করে এগিয়ে যান সার্বিয়ানরা। প্রথমার্ধের অন্তিম লগ্নে সমতা ফেরানোর পর দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই দারুণ ফিরে এসে গোল দিয়ে ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে যান সুইসরা। শেষ পর্যন্ত এই ফলাফলেই ম্যাচ শেষ হওয়ায় এই গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় দল হিসাবে উত্তীর্ণ হয়ে পরের রাউন্ডে পর্তুগালের মুখোমুখি সুইটজারল্যান্ড। কিন্তু কাতার বিশ্বকাপে প্রত্যেকদিনই অঘটনের ঘনঘটা ঘটেই চলেছে। এখন শেষ ষোলোর খেলাগুলিতে আবার কি ধরনের অঘটন ঘটে নাকি চিরাচরিত শক্তিশালী দেশগুলিই এগিয়ে যায় সেটাই এখন দেখার।