পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

জেএনইউ র ছাত্র আন্দোলনের কিছু কথা।

  • 19 November, 2019
  • 0 Comment(s)
  • 2619 view(s)
  • লিখেছেন : প্রত্যুষ নন্দী
জেএনইউ র ছাত্ররা বিগত ৬ বছর ধরে লড়ছে। লড়বে আগামীদিনেও। আমাদের একমাত্র করণীয় তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে জনতার এই বিশ্ববিদ্যালয়কে বাঁচিয়ে রাখা।


আমি জেএনইউতে পড়তে যাই ২০১৪ তে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার ঠিক পরে। মোদী সরকার ক্ষমতায় আসাতে দুঃখ তো হয়ইনি বরং কিছুটা আনন্দিতই হয়েছিলাম। আচ্ছে দিনের প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করেছিলাম। ইউনিভার্সিটিতে কিছুদিন থাকার পরই বুঝেছিলাম যে জায়গাটি একটু আলাদা। অবাধ স্বাধীনতা চলাফেরা আর কথা বলার। ডিনারের পরে মেসে ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান বা রাজনৈতিক ক্লাস নিচ্ছেন স্বনামধন্য মনীষীরা। দেশের সরকারে বিভিন্ন নীতিকে সমালোচনা করা হচ্ছে চায়ের দোকানে বসে। জ্ঞানচর্চা চলছে ক্যাম্পাসের প্রতিটি কোনায়। ছাত্রসংঘের যখন ভোট হল অবাক হয়ে দেখলাম ভোট চালাচ্ছে ছাত্ররা। ভোটে আদর্শের সংঘাত আছে কিন্তু শারীরিক সংঘাত নেই। ছাত্র রাজনীতি যে গঠনমূলকভাবে করা যেতে পারে এই ধারণাটার সম্মুখীন প্রথমবার হলাম। রাজনীতির দিকে সবাভাবিক ভাবেই ঝুঁকে পড়লাম।

কিছুদিন পর হঠাৎ খবর পেলাম যে পিএইচডি করার সময় নন নেটদের যেই নূন্যতম বৃত্তি ভারত সরকার দিত তা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। জেএনইউএর ছাত্ররা ক্ষোভে ফেটে পড়ল। তারপর দিন থেকেই শুরু হল ইউজিসি র বাইরে অবস্থান। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের , জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াএবং আরও ছাত্ররা যোগ দিল সে অবস্থানে। সেদিন পরিষ্কার হয়ে গেছিল যে জেএনইউএর ভেতরে এতদিন ধরে যে WTO ও তার নিওলিবারাল এজেন্ডার কথা শুনছি সেই বস্তুটি কী। সেদিন থেকেই আমার প্রকৃত রাজনৈতিক নাগরিক হিসেবে জীবন শুরু।


tweet pic


WTO বা World Trade Organisation এর অনেকদিন থেকে দাবী যে ভারত বিভিন্ন ক্ষেত্র অবাধ ব্যবসার জন্য খুলে দিক। তার মধ্যে একটি হল শিক্ষাক্ষেত্র। ভারত সরকার সেই শিক্ষাক্ষেত্রকে ১৯৮০ র দশক থেকেই ধীরে ধীরে নীতিগত ভাবে বদলাতে শুরু করেছে। আমরা জানি যে আজকে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি প্রায় সর্বত্রই। প্রযুক্তিগতবিদ্যা প্রায় পুরোটাই প্রাইভেট হাতে। সরকারী জায়গাগুলিতেও আকাশছোঁয়া মাইনে যেমন আইআইটি। তো সরকারী সংস্থানে মাইনে বাড়ানো বা নতুন সংস্থান না তৈরী করা একটাই ফর্মুলার অংশ। WTO বলছে ব্যবসায়ীদের প্রতিযোগিতার জন্য সমান ক্ষেত্র সরকারকে তৈরী করে দিতে হবে। বা ইংরেজিতে“ level playing field”. তো সেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি চলছে। সরকার আবার শিক্ষানীতি বদলাতে চলেছে। এই নীতির পথে সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটিগুলো কাঁটা হয়ে দাড়িয়ে আছে। কম পয়সায় ভাল শিক্ষা সরকারী জায়গায় পাওয়া গেলেই তা প্রতিযোগিতার জন্য ক্ষতিকারক। সেইজন্য জেএনইউ দেশবিরোধী এবং.তারই ফলস্বরূপ জেএনইউ র হোস্টেল ফি বৃদ্ধি।

জেএনইউতে বহুদিন ধরেই একটা ভয় এবং দম বন্ধ করা অবস্থার সৃষ্টি করেছে সরকারওপ্রশাসন।প্রথমে২০১৬তে তাকে দেশবিরোধী তকমা দেওয়া।তারপর প্রবেশিকা নিয়মাবলী এমনভাবে পালটে দেওয়া যাতেগরীব মানুষ এবং শোষিত জাতির মানুষরা এই সংস্থায় ঢুকতে না পারে।নাজিব নামে একজন ছাত্রের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলাওগায়েব হয়ে যাওয়া।প্রশাসন সেই ঘটনায় অত্যন্ত নিন্দনীয় ভূমিকা নিয়েছিল।লাইব্রেরির বই কেনার খাতে খরচ কমিয়ে দেওয়া।সরকারি ছাত্র সংগঠনকে মদত দেওয়া।প্রশাসনিক পয়সা নয়ছয় করা এবং অপচয় করা।লাগাতার ছাত্ররা জেএনইউতে আন্দোলন করে চলেছেপ্রশাসনেরবিরুদ্ধে।

জেএনইউ প্রশাসন অক্টোবর মাসের শেষের দিকে হোস্টেল সংক্রান্ত নিয়মাবলী বদলানোর কথা বলে।সেখানে বলা হয় হোস্টেলের বিভিন্ন খাতে ফিস বেড়ে যাবে।যোগফল করলে প্রতি বছরে হোস্টেল খরচ২৭০০০টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ৬২৫০০-৬৬০০০টাকা।ছাত্ররা এখন ১১টার পর হোস্টেল বিল্ডিংএর বাইরে বেরোতে পারবে না।বলা হয় যে মেসে খেতে আসতে গেলে ছাত্রদেরকে সভ্য সুশীল জামাকাপড় পড়ে আসতে হবে।ড্রেসকোডএর ইঙ্গিত খুব সহজে বোঝা যাচ্ছে মহিলাদের দিকে পিতৃতান্ত্রিক প্রশাসনের নির্দেশ।

১১টায় হোস্টেলে ঢুকে কেন যেতে হবে যখন জেএনইউ একটি ক্লোসড ক্যাম্পাস আর বেশীরভাগ ছাত্রই এখানে গবেষক এবং প্রাপ্তবয়স্ক? জেএনইঊএর অসাধারণ জ্ঞান চর্চার পরিবেশকে নষ্ট করার যে এ নিয়ম সেটি বুঝতে অসুবিধে হয় না। শেষে আসি ফিস বৃদ্ধিতে। জেএনইউ প্রশাসনের নিজের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ছাত্রদের প্রায় ৪০ % ছাত্র এমন সব পরিবার থেকে আসে যাদের বার্ষিক আয় ১৪৪০০০টাকার কম। সেই সব পরিবারের যদি ৪০ % আয় একজন সদস্যেকে শিক্ষা দেওয়ার জন্যেই চলে যায় তো তারা বাঁচবে কিভাবে তার ওপর প্রশ্ন চিহ্ন তৈরী হয়। তার ঠিক ওপরের আয়ের পরিবারদের অসুবিধাও খুব কম হবেনা। অনেক ছাত্রই জেএনইউতে আছে যাদেরকে জেএনইউএর সিনিয়ার বন্ধুরা আর্থিকভাবে সাহায্য করে। এদের কাছে ফিস বৃদ্ধি হওয়া মানে তাদের শিক্ষার ইতি টেনে দেওয়া। ঠিক এইসব কারণগুলোর জন্যেই জেনইউএর সাম্প্রতিক আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলন ছাত্রদের বাঁচার লড়াই। জেএনইউএর নাম ও মান বাঁচানোর লড়াই। ছাত্রদের পিছু হটার জায়গা নেই।

জেএনইউর ছাত্ররা বিগত ৬ বছর ধরে লড়ছে। লড়বে আগামীদিনেও। আমাদের একমাত্র করণীয় তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে জনতার এই বিশ্ববিদ্যালয়কে বাঁচিয়ে রাখা।

0 Comments

Post Comment