পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

গুম

  • 27 January, 2020
  • 0 Comment(s)
  • 1440 view(s)
  • লিখেছেন : আবু সঈদ আহমেদ
একটি ছোট গল্প, পুরনো কিছু স্মৃতি নিয়ে লিখলেন আবু সঈদ আহমেদ

চারিধারে আকাশ ঢেকে ফেলা দালান কোঠার মাঝে টিকে আছে এক টুকরো সবুজএকটু ভালোভাবে লক্ষ্য করলে সেই সবুজের ফাঁকে একটি জীর্ণ ঘর দেখা যাবেসন্ধ্যার অন্ধকারে এলে হয়তো মোমের আলোও চোখে পড়বেবিকেলে বা শেষ দুপুরে সেখানে হয়তো কিছু সমস্যাগ্রস্ত আগন্তুক বা মাজারের খিদমত করা এক বৃদ্ধকেও দেখা যেতে পারেমাজার আর পাশের এই কবরস্থানদক্ষিণ কলকাতার এই অঞ্চলের অতীতের মুসলিম বসতির শেষ চিহ্ন

খাদেম রফিক শেখ ঝিমোচ্ছেনসন্ধ্যার কিছু পড়েই মাজারের দরজা লাগিয়ে চলে যাবেন তিনিকবরস্থানের অনেকটা অংশই বেদখল হয়ে গেছেমাজারটা ছিল বলে আশেপাশের বসত বাড়িগুলো সেই অবধি এসেই থেমে গেছেযে টুকু টিকে ছিল তার চার ধারের সীমানা দেওয়া তারের বেড়াও প্রায় উধাও হয়ে গেছেতাতেও চিন্তিত নন রফিক শেখএখানে নেওয়ারই বাকি আছে? আশেপাশের কিছু কাঁটা লতার ঝোপঝাড়, আর এই পাথরের কবরওয়ালা ঘরএর ওপরের চাদর আর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কিছু মোমবাতি ধুপকাঠিএগুলো বেচে এক মুঠো বিড়িও জুটবে নাতাই ভাবনা ওনেই রফিক শেখেরআগের খাদেম মারা যাওয়াতে বয়সের ভারে কায়িক পরিশ্রম থেকে অবসর নেওয়া মুটে মজুর রফিক নিজের কাঁধে মাজার খিদমতের ভার তুলে নিয়েছিলেনসে জন্য সকাল সকাল এখানে চলে আসায় বাড়িতে বসে গঞ্জনা শুনতে হয় না যেটা তাঁর বয়সী অনেককেই শুনতে হয়মাজার জিয়ারত করতে এসে কেউ যদি কিছু দিয়ে যায় তবে সেটা তাঁর উপরি পাওনাতিনি নিজে থেকে কিছু চান নাসন্ধ্যা নামার কিছু পরে ঝাড় পোঁচ করে চলে গেলে মাজারের বন্ধ দরজার ফাঁক ফোকর গলে টিমটিম করে কখনো সখনো মোমবাতির আলো আসতে থাকেসেখানেই আজ দাঁড়িয়ে আছে এক যুবকআকাশে চাঁদ উঠে জায়গাটায় খুব অন্ধকার নেই, তবুও কেউ তাকে লক্ষ্য করবে সেই সম্ভাবনা খুব কমচারিদিকের উঁচু বাড়িতে যাঁরা থাকেন তাঁদের কারোরই ঠেকা পড়েনি এই পরিত্যক্ত কবরস্থানে কি হচ্ছে উঁকি দেওয়ারসেখান থেকে কোন শব্দ এলেও সেটা কুকুরের হুটোপুটির মতই শোনাবেমোবাইলের আলোয় জেব থেকে কিছু কাগজ বার করে দেখে নিল সেই যুবক

বছর কয়েকের পুরনো খবরের কাগজ খুঁজলে হয়তো ভেতরের পাতার এক কোণে একটা খবর চোখে পড়বেযার শিরোনাম ছিল "শিশু পুত্রসহ নিখোঁজ গৃহবধু"এক দুবার হয়তো এই খবর সংবাদপত্রে স্থান পেয়েছিল তারপর আর নয়

ছোট্ট শাবল দিয়ে মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে যুবকের মনে পড়ে গেল মায়ের শেষ জীবনের শয্যাশায়ী অবস্থায় বলে যাওয়া বিক্ষিপ্ত কথা গুলো "দরজার পাশের কবর ", "দুইহাত...দুই হাত নিচে" এই কথাগুলো অনেকবারই শুনেছে তখনহঠাৎ একবার সেই একবারই শোনা গেছিল জায়গার নামসেই জায়গা যেখানে কেটেছে তার ছোটবেলাঘরের বাইরে যাই থাক, ঘরের ভেতরে ছিল বাবা মায়ের অশান্তির বিষময় পরিবেশতারপর একদিন বলা ভালো এক রাতে মায়ের হাত ধরে বেরিয়ে পড়াতারপর কেটে গেছে এই কবছর

যুবক চলেছে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় আলোকিত রাস্তা ধরেদুই হাতের অনেক বেশিই খুঁড়তে হয়েছিলখুঁড়ে যা পাওয়া গেছিল তা নিয়ে এখনও ঠিক করে উঠতে পারেনি সেএকবার মনে হয় বেচেই দেবে গয়নাগুলো, আবার মনে হয় কি দরকার, থাকুক না সেগুলো স্মৃতিচিহ্ন হয়েশুধু মায়ের স্মৃতিই নয়, তার ছেলেবেলার জায়গার

0 Comments

Post Comment