পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

কু নাট্য

  • 24 November, 2019
  • 0 Comment(s)
  • 1827 view(s)
  • লিখেছেন : হুতোম প্যাঁচা
ফোন আপনারই থাকবে, কিন্তু আমি সব জানতে পারব কাকে কী বলছেন, কী পাঠাচ্ছেন, কোথায় যাচ্ছেন। আর সুবিধামত আমার যা ইচ্ছে তাও ঢুকিয়ে দেব আপনার ফোনে।
আমার প্রিয় সম্পাদকটির গিন্নী নিরুদ্দেশ। কাশ্মীরিদের টাইট দেয়া, অযোধ্যায় মন্দির তৈরি, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠ্যাঁটা ছেলেমেয়েগুলির চৌদ্দ পুরুষ উদ্ধার কত্তে ব্যস্ত সম্পাদকমশায় টের পাননি গিন্নীর মনটি কোন অ্যান্টিন্যাশনালে হরণ করেচে।
“কে বলে টের পাইনি?” সম্পাদক রুখে উঠে বল্লে। “গিন্নীর উপর তেনার নজর যে পড়েছে সে আলবাত টের পেয়েছি। কিন্তু এতদূর গড়াবে তা ধরতে পারিনি।”
পাঠক লক্ষ্য করুন, ইনি মাসান্তে মোটা মাহিনা পান, বাড়ি পান, গাড়ি পান খবর জানা এবং জানানোর জন্যে। এদিকে নিজের গিন্নীর খবরটি রাখতে পারেননি। গিন্নীর অবর্তমানে মুখরা রাঁধুনির চোপা সহ্য কত্তে হচ্চে এবং আদরে বানরী কন্যা নাহক গঞ্জনা কচ্ছে ইত্যাদি ফালতো কাহিনী বলে হুতোমের দিবানিদ্রার সর্বনাশ করবার পর ঘটনাটি বিস্তারিত বয়ান কল্লেন।
গিন্নী কার সাথে পলায়ন করেচেন সেটি সম্বন্ধে একনো নিশ্চিত না হলেও সম্পাদক আন্দাজ কত্তে পাচ্ছেন গুণধরটি হলেন এক মন্ত্রীমশাই। বাবুটি সম্বন্ধে আমার সম্যক ধারণা ছিল না। সম্পাদক বল্লে “সাক্ষাৎ রাবণের বংশধর। ও শালা অন্যের বৌ ভাগাবে না তো ভাগাবে কে?”
বল্লেম দেশে আইন আদালত আচে, সেপাই প্যায়দা আচে, তোমার লোক খাইয়ে বে করা বৌ নিয়ে চলে যাবে এ বা কী কথা? তুমি কতবড় কাগচের সম্পাদক, পুলিশের বড় মেজ সেজ কত্তারা তোমার ইয়ার দোস্ত। তুমি চাইলে কি আর বিহিত কত্তে পারো না? কথা শুনে সম্পাদক ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থেকে, বল্লে বিশ্বেস করবেন না, ভেউ ভেউ করে কাঁদতে শুরু কল্লে।
“আরে হুতোমবাবু, কোন পুলিশ? কার পেয়াদা? সকলের তো উনিই মনিব। আমার বৌটাকে হয়ত পুলিশ পাঠিয়েই তুলে নিয়ে গেছে। শ্বশুরমশাই তো সকালে খবর পাওয়া থেকে কেঁদে সারা।”
হতভাগা বলে কী! লোকে এমন গাঁটকাটা বাবুদের ভোট দিয়ে মন্ত্রী সান্ত্রী করে নাকি এদানি! আচ্ছা সে নয় হল। দেশে আদালত আচে তো। সোজা সেকানেই যাও না কেন? ধর্মাবতার কানমলা দিলে পাইক বরকন্দাজ সকলেই নড়ে চড়ে বসতে বাধ্য। নয় কি?
সম্পাদক ডেস্কের নীচ থেকে রামের বোতল বের করে ছোটলোকের মতন আমায় না শুধিয়েই এক ঢোঁক খেয়ে নিলে। তারপর চোখের নোনা জল চাটতে চাটতে বল্লে “ওরে বাবা, ধর্মাবতারদের কি প্রাণের মায়া নেই? তেনাদের মর্নিং ওয়াকে যেতে হয় না?”
শুনেচি ভূতের পিলে থাকে না, তবু কথাটি শুনে মনে হল পিলেটি যেন চমকে উঠল। বেচারা সম্পাদকের জন্যে সত্যই হুতোমের মনটি হু হু কত্তে লাগল। ভাবলেম দেড়শো বচ্ছর আগে পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে কি ভালই না হয়েচে। ফট্টি টুর খোলা জানালা দিয়ে তকন ঝিঁঝি খেলার ময়দানের গোলাপি আলোর রেখা দ্যাকা যাচ্চে। আলোটিকে সম্পাদকের জন্যে আশার আলো বলে মনে হল। বল্লেম কড়া করে তোমার কাগচে লিকে দাও দিকি? এই গাঁটকাটা মন্ত্রীমশায়ের কেলেঙ্কারি দাও ফাঁস করে। তকন বুঝবে ঠ্যালা।
সম্পাদকের তকন চোকের জল শুকিয়েচে, নেশা চড়চে। ফ্রান্সিস বেকন সায়েবের মতন হেসে বল্লে “ক্ষেপেছেন? কাগজে এসব বেরোলে সকাল সকাল আমার চাকরিটি নট হয়ে যাবে। তারপর লাশটাও গায়েব হয়ে যাবে। ক বছরে এমন কত হল চোখের সামনে...”
বলো কী হে! এমনটি আগেও হয়েচে! মন্ত্রীর বুঝি তোমাদের শাহরুখ কি আমির খানের মতন বদনটি? মহিলারা দ্যাকেন আর প্রেমে পড়েন?
“প্রেমে পড়েন না ছাই। তেনার কুনজরে পড়েন বলুন। প্রেমে পড়লে কিছু বলার ছিল না, কেবল কপালের দোষ দিতাম।”
তাজ্জব! ব্যাটার গিন্নী হোয়াটস্যাপ করে গ্যাচেন, তবু বলচে প্রেমে পড়েননি! সম্পাদক হুতোমের মনের ভাব বুঝে বল্লে “হোয়াটস্যাপ কি আর গিন্নীর আছে? ও হোয়াটস্যাপে যা ইচ্ছে লিখে দিলেই হল। ফোনের লাগাম তো মন্ত্রীমশাইয়ের হাতে।”
সে আবার কেমনধারা?
“ও আপনি বুঝবেন না। ফোন আপনারই থাকবে, কিন্তু আমি সব জানতে পারব কাকে কী বলছেন, কী পাঠাচ্ছেন, কোথায় যাচ্ছেন। আর সুবিধামত আমার যা ইচ্ছে তাও ঢুকিয়ে দেব আপনার ফোনে।”
চোক কপালে তোলবার আগেই যোগ কল্লে “এই করে কতজনকে গারদে পোরা হল। আমরাই তো সব লিখলাম... কে কত বড় টেররিস্ট, অ্যান্টিন্যাশনাল...”
বলতে বলতে আবার সম্পাদক কেঁদে ভাসালে। হুতোম নজর করে দেকলেন বেচারাকে দেকতে খানিক অমাবস্যার দিনে কালীঘাটের বলির পাঁটার মতন লাগচে।
ইতোমধ্যে সম্পাদকের ফোনটি বাজল, চমকে উঠে ভাবলেম গাঁটকাটা মন্ত্রীর ফোন বুঝি। সম্পাদক রামের বোতল খালি কত্তে কত্তে কেবল হ্যাঁ হুঁ করে গেলে। কথা শেষ হলে আমায় বল্লে “মন্ত্রীমশাই আর যা-ই হোক, ভদ্রলোক কিন্তু। আমার বউকে রীতিমত পুরুত ডেকে বিয়ে করেছেন।”
সে কি হে! কখন?
“ঠিক ভোর পাঁচটা বেজে সাতচল্লিশ মিনিটে। যে রিপোর্টারকে গিন্নীর সন্ধানে পাঠিয়েছিলাম, সে জানাল।”
হিঁদুর মেয়ের স্বামী বর্তমানে আবার বিবাহ পুরুতমশায় কী করে সিদ্ধ কল্লেন?
“স্মল ম্যাটার,” সম্পাদক চোক টোক মুছে ল্যাপটপটা অন কত্তে কত্তে বল্লে। “মূল্য ধরে দিলেই আগের বিয়েটা অসিদ্ধ হয়ে যায়।”
তা ভায়া তুমি একন কী করবে?
“জমিয়ে কলামটা লিখে ফেলি। জিনিয়াস ছাড়া উইদাউট ভায়োলেন্স এরকম একটা কু যে কেউ পুল অফ করতে পারে না সেটাই লিখতে হবে জমিয়ে।”


0 Comments

Post Comment