পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

জয় সম্পাদক

  • 28 July, 2019
  • 0 Comment(s)
  • 2121 view(s)
  • লিখেছেন : হুতোম প্যাঁচা
সম্পাদকদের রকম ফের এবং তাঁদের কথাবার্তা নিয়ে কিছু কথা, সম্পাদকেরা মারা গেলে কিন্তু সবাই ভুলে যান পুরনো কথা, তাই নিয়ে হুতোম প্যাঁচার কলম।

ফিরে তো এলেম, কিন্তু থাকা হবে কোতায়? কলকেতায় পুরানো বাড়িঘর তো আর রাখা হচ্চে না কিচু। শেষে কি জাত খুইয়ে জ্যান্ত মানষের ঘরে থাকব নাকি রে বাপ? সম্পাদককে বলতেই সে বল্লে “ভাবনা কি? পুরানো বাড়ি ভেঙে পেল্লায় সব নূতন প্যালেস হচ্চে। সাদা টাকার বাবু বিবিরা ট্যাক্সো বাঁচাতে ঋণ কচ্ছেন আর এসব প্যালেসে ঘর কিনে রেখে দিচ্চেন। কালো টাকার বাবুরা ভাই বেরাদর, মোসাহেব, আপিসের শ্রীরাধিকা, মদ গেলার বন্ধু কি তেনার রাঁড়ের নামে কিনচেন। তা এইসব ফ্ল্যাটে জনমনিষ্যি নেই। তেমনি একখানায় থাকুন।” আমি বল্লেম “কোন ফ্ল্যাটে হ্যাপা নেই বুজব ক্যামনে? ধরো কদিন দিব্য আচি, হটাৎ বুড়ো হাবড়া মালিকবাবুটি গার্লফ্রেন্ড ছুঁড়িকে নিয়ে হাজির হলেন। তকন? ওসব বুড়োর পীরিত বড় রগরগে হয় বাছা। আমোদ কত ঠিক নেই, হল্লার চোটে বাবু তিষ্ঠোতে দেবেন না।” তা সম্পাদক বিনয়ের অবতারটি হয়ে টাক চুলকে বল্লে, এজ্ঞে আমারই একখানা সাজানো গোজানো ফ্ল্যাট সুনসান পড়ে আচে। সেকানেই থাকুন না কেন? এক্কেরে চল্লিশ বেয়াল্লিশ তলা উপরে, ময়দানের টাটকা বাতাস পাবেন, কলকেতার গোলমাল মালুম হবে না। আরামে থাকুন, নরক থেকে পাঁচো ইয়ার নিয়ে এসে হুল্লোড় কল্লেও কেউ টেরটি পাবে না। শুনে তো আমার চক্ষু ফট্টি টু। সম্পাদক বলে কী? ব্যাটা যে ফ্ল্যাটে থাকে তারই মূল্য নাকি বাজারে লাখ ষাটেক, আবার একটি কয়েক কোটির ফ্ল্যাট কিনেচে কিরকম? আমাদের কালের খানদানি বাঈজির মতন লাজুক হাসিটি ঝুলিয়ে সম্পাদক বল্লে “আহা, আমি কি আর একা করেচি? কত সম্পাদকেই তো কচ্ছে। আমি নেহাত ভদ্রলোক। যা করেচি গিন্নীর কাচে সবকটির হিসেব আচে। তিনটি গাড়ি কিনেচি, একটি বাড়ি করেচি আর দুটি ফ্ল্যাট। এতখানি বয়েসে না সেক্রেটারি না গার্লফ্রেন্ড, না কাটমানি না ব্ল্যাকমানি। আর আপনি কিনা আমার দিকে কটমটিয়ে তাকাচ্চেন? জানেন কতরকমের ত্যাঁদড়া সম্পাদক আচেন?”

দেকলেম সত্যই ছোকরার থেকে অনেক শেখবার আচে। তা বাদে এক ঢিলে দুই পাখি। এই গরমে আদাড়ে বাদাড়ে ঘুরে নকশা খুঁজতে যাওয়া ঝকমারি। বিশেষ হাতের কাচেই যকন এমন মুচমুচে গপ্প পাওয়া যাচ্চে। সম্পাদকও বল্লে, দিন শালা লিকে। আমি ওদের নামে লিকলে তো আবার হিংসুটেগুলো ই ডি কে আমার এফ ডি র পেচনে লাগিয়ে দেবে। এই গরমে বাপু আমি ভিনরাজ্যে হাজতবাস কত্তে রাজি না। আপনিই লিকুন।” সে বল্লে আর আমি লিকলেম।

চামচে সম্পাদক

ত্যাঁদড়দের মদ্যে এনারা সবচে নিরীহ। জীবনে কারো সমন্দে একটি মন্দ বাক্য লেকেননি। কর্পোরেট মইয়ে তরতরিয়ে উঠেচেন আপিসে যকন যেনাদের ক্ষ্যামতা বেশি ছিল তেনাদের প্রকাশ্যে ও গোপনে তেল মাখিয়ে। তবে আসল তীরগুলি মেরেচেন নেতা নেত্রীদের তুষ্ট করে। কোন ঠাকুর কোন ফুলে আহ্লাদে আটখানা হন বুজতে এনাদের জুড়ি নেই। দাদাকে গিয়ে বলবেন উইনস্টন চার্চিলের পরে এত বুদ্ধি ধরেন এই আপনাকে ছাড়া আর কাউকে দেকলেম না। দিদির ঘনিষ্ঠ হলে বলবেন এই যে আপনার সাদাসিধে জীবন, মহাত্মা গান্ধী ছাড়া দেশে আর কারই বা ছিল? কেবল বলেই ক্ষান্ত নয়, কাগচে লিকেও দেবেন। পরদিন সকালে ফোন করে জানাবেন কত নম্বর পাতার কত কলমে লেখাটি জ্বলজ্বল কচ্ছে। যেনারা উদ্যমী তেনারা অবিশ্যি কাগচখানা নিয়ে দাদা দিদির বাড়ি চলে যাবেন গাড়ু হাতেই। এ সওয়ায় নেতা বিলেত গেলে সম্পাদকটির সঙ্গে যাওয়া হবে, কোরাসে তালি দিয়ে ছায়াছবির ভক্তিগীতি গাওয়া হবে এবং সুযোগ মতন বিলিতি কলাটা মুলোটা চামচেটা সরান হবে। ধরা পড়ে গেলেও ভাবনা নেই। বাবুরা যেনার সাথে গিয়েচেন তেনার সম্মানের কতা ভেবে সায়েব, মেমরা কিঞ্চিৎ বেইজ্জত করেই ছেড়ে দেবেন। তা এত কাণ্ড করে বিলেত গিয়ে গায়ের চামড়া ওটুক মোটা হবে না এ বা কি কথা?

নেতা সম্পাদক

মুম্বইয়ে যে সমুদ্দুরটি আচে সেটি যে বঙ্গোপসাগর তা এনার কাচে না মেনেচ কি মরেচ। সম্পাদকমশায় চাকরিটি খেয়ে নেবেন। কি কি একজামিন পাশ করেচেন সে কতা জিজ্ঞেস কল্লে অ্যায়সা ধমক দেবেন যে স্বয়ং মা সরস্বতী নাকের জলে চোকের জলে হবেন। তা বলে মানুষটি মোটে নড়বড়ে নন। ইনি মেসি বোঝেন, হেমন্ত আর মান্না বোঝেন, জিডিপি বোঝেন, ডিলান বোঝেন, শাহরুখ বোঝেন, মায় পেটো আর ওয়ান শটারও বোঝেন। তবে সবচে ভাল যা বোঝেন তা হল লাইন। লাইন ব্যাপারটি খুলে বলা আবশ্যক। বড় দাদা দিদিদের দিনে একটিবার দরবার বসে। সে দরবারে পায়ের কাছটি থেকে মোড়ের সিগনাল অব্দি লাইন পড়ে। কোন হতভাগার ছেলের অসুখ, চিকিচ্ছের পয়সা নেই, তিনি লাইনে। কোন হাভাতের চাট্টি হকের টাকা পাড়ার মস্তানে ফিস্টি করবে বলে নিয়ে গেচে, সেও লাইনে। একানে তদবির করে যদি নিদেন চার পয়সা ফেরত পাওয়া যায়। কার আবার মেয়েটি দেকতে শুনতে ভাল হওয়ায় কালেজ যাওয়া দায় হয়েচে, দরবারে বল্লে যদি রোমিওটির লাগামের ব্যবস্তা হয়। কিন্তু আমাদের সম্পাদককে এসব ছেঁদো লাইনে পাওয়া যাবে নাকো। তেনার লাইন নেতা হবার লাইন। কখন কোন কতাটি বল্লে আর লিকলে রাজ্যসভা কি লোকসভা, নিদেন বিধানসভার টিকেটটি পাওয়া যাবে সম্পাদকের সেইটে দিনমান মাতায় থাকে। ত্যাঁদড়দের মদ্যে এমন কৃতি সন্তান আর নাই।

জমিনদার সম্পাদক

এনারা হচ্চেন ত্যাঁদড় শিরোমণি। প্রায় জনের বপুটি বিশাল। হাসলেই মনে হবে বিলিতি গপ্পে যে জমিদার বংশটির লোককে রক্তচোষা বাদুড় বানিয়েচে, বাবুটি সেই বংশেই বাতি ধরচেন। বাঁচোয়া যে এনারা প্রভুর ঠাণ্ডা ঘরের বাইরে সচরাচর হাসেন না। এনাদের জমিনদার বলে কেন? কারণ এনারা আদতে চাকুরে, তবে মনে করেন কাগচটি বা চ্যানেলটি এনাদের বাপ-পিতেমোর সম্পত্তি। আর নীচে যারা কাজ করে তারা সব অধীনস্থ প্রজা। বিদ্যাসাগর মশায়ের ইয়ার অক্ষয়কুমার দত্ত মশায় জমিনদারদের পল্লীগ্রামস্থ প্রজাদিগের দুরবস্থা নিয়ে বিলক্ষণ লিকেচেন, কিন্তু জমিনদার সম্পাদকদের প্রজাদের দুরবস্থা দেকলে তেনারও পিলে চমকে যেতে পারত। এ প্রজারা কাজ করেন, নাম করেন সম্পাদক। বাবু লিকবেন তার খোরাক যোগাবেন এক প্রজা, ভুল হলে খিস্তি জুটবে আরেক প্রজার কপালে, তবে কাগচে নামটি বেরোবে কেবল সম্পাদকের। অন্য কারো নাম বেরোবার উপক্রম হলে সম্পাদক বলবেন “ব্যাটা ইংরেজি জানে না। মূর্খের নাম আমার কাগচে বেরোলে ইজ্জত থাকে না।” আবার অন্যদিন বলবেন “এ ব্যাটা বেশি ইংরেজি জানে। সবজান্তার নাম আমার কাগচে বেরোলে ইজ্জত থাকে না।” এ প্রজাদের ঘর নেই, বউ ছেলে নেই, ইয়ার দোস্তের বিয়ে সাদি নেই, কেবল বাবু আচেন। মায় ঘুম পয্যন্ত নেই। বাবু যদি রাত তিনটেয় বলেন একন সকাল তালে সকাল, যদি বিকাল তিনটায় বলেন একন সূয্যি উঠচেন তালে তিনি উঠচেন। এক বাবুর প্রজা যকন গিয়ে জানিয়েচিলেন তেনার একটি সন্তান হবে, তকন বাবুটি সরোষে বলেচিলেন “এই কি হবার সময়? আমায় শুধোন কর্তব্য ছিল।” তা বলে ভাববেন না এই সম্পাদকরা প্রতিভা চেনেন না। এক সম্পাদক তেনার এক প্রজাকে বলেচিলেন তিনি অকম্মার ঢেঁকি। প্রজাটি মনের দুঃখে চাকরি ত্যাগ করেন, অতঃপর জজিয়তি করে বিলক্ষণ সুনাম ও অর্থ উপায় করে সুখে অবসর নেন। শুদু অন্যের প্রতিভাই বা কেন? কতা যকন উঠল তকন জমিনদার সম্পাদকদের নিজেদের প্রতিভার কতাও না বল্লে দোষ হয়। এক সম্পাদক অষ্টপ্রহর গলা সপ্তমে চড়িয়ে, অতিথদের মুক খুলতে না দিয়ে চ্যাঁচাতে পারেন। বিলেত গিয়ে ইংরেজি শিকেচিলেন, তাই কখনো সুট বুট না পরে এই ছোটলোকামিটি করেন না। একটি ইংরেজি শব্দ কলের গানের কাটা চাকতির মতন টানা দুই মিনিট আউড়ে যাবার ক্ষ্যামতা ধরেন। উদাহরণ “নেভার এভার এভার এভার।” আরেক সম্পাদক চল্লিশ বচ্ছর ধরে কেবল যে যা বলচে হুবহু তাই লিকে গেলেন। নিন্দুকে বলে একবার নাকি পুলিশের গন্ধ শোঁকা কুকুরের উক্তিও লিকে দিয়েচিলেন। শেষমেশ কোন দুর্বিনীত প্রজা আপত্তি করায় সেভাবেই ছেপে বেরোতে পারেনি, উক্তিটি কুকুরের ঘনিষ্ঠ সূত্রের উক্তি বলে উল্লেখ করা হয়েচিল। প্রজাটির চাকরি গেচিল কিনা সে সংবাদ পাওয়া যায়নি। এনাদের ভক্তকুলও ফেলে দেবার নয়। জমিনদার সম্পাদকদের জীবনের বড় ফয়দা হল যকন বিদায় নেন তকন সক্কলে (এমনকি অনেক প্রজাও) এত চোকের জল ফ্যালেন আর এত মালা পরান যে বাবুরা নিজেরাও ভুলে যান কত লোককে কত কাঁটা ফুটিয়েচেন। লেজেন্ডের নীচে স্তুতি থাকে না। অনেকে আবার গলায় রসকলি এঁকে বলেন “প্রভু, তুমি চলে যাচ্চ? যে কাগচ তোমায় রাখে না, তাকে কাল থেকে পাড়ায় ঢুকতে দোব না।” শুনে বাবুরও চোক ছলোছলো। গোঁপ চুমরে ভাবেন, তিনি কি ধোনির চে কম যে বয়েস হলেই ঝাঁপ ফেলতে হবে? তা বাদে বয়েসই বা এমন কি? যে বয়েসে নূতন গার্লফ্রেন্ড জুটতে পারে সে বয়েস কি আর বিদায়ের বয়েস? সব শুনে আমাদের সম্পাদককে বল্লাম “এমন সব সম্পাদক! পাঠক, দর্শকের দেকচি মহা দুর্দশা!” সে চটে উঠে বল্লে “আপনি কোন দলে খোলসা করে বলুন দিকি? পাঠকের জন্যে এত পিরীত কিসের?”

0 Comments

Post Comment